জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই জুলাই সনদ অবশ্যই নতুন সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। এটি আমাদের আবেগ নয়, এটি আমাদের রাজনৈতিক ইস্তেহার ও ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশনা। আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে এই জুলাই সনদের ভিত্তিতে।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথায় মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই পদযাত্রা’র পঞ্চম দিনের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন—জুলাই সনদকে নতুন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত না করলে আগামী ৩ আগস্ট থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ফের আন্দোলনে নামবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “যারা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা সংবিধানে রাখতে চায় না, তারা মুজিববাদের নতুন পাহারাদার। আমরা তাদেরকে আর রাজনীতিতে স্থান দিতে চাই না। ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সংবিধানেই। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়নি।
আগের মতোই স্বৈরাচারি কাঠামো টিকে আছে, লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি দলের পরিবর্তে আরেক দলকে বসাতে আন্দোলন করিনি। আমরা রাজপথে নেমেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে। এ লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বগুড়ার প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, বগুড়ার প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি কেউ দলীয় স্বার্থে প্রশাসন পরিচালনা করে, তার পরিণতিও হবে অতীতের স্বৈরাচারদের মতো। বগুড়ায় দলবাজ প্রশাসনের কোনো স্থান হবে না। পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ হতে হবে।
শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কাঁদলেন স্বজনরা। পদযাত্রা শুরুর আগে শহরের পর্যটন মোটেলে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় স্বজনদের চোখের জল থামেনি। তারা শহীদদের জন্য দ্রুত বিচার এবং পরিবারগুলোর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
নাহিদ বলেন, জুলাই সনদের মাধ্যমেই শহীদদের আত্মত্যাগ স্বীকৃতি পাবে। শেখ হাসিনা এবং যারা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছেন, তাদের বিচার বাংলার মাটিতেই করতে হবে। বিচার, সংস্কার তারপরই নির্বাচন। জুলাই স্মরণ ও ভবিষ্যৎ কর্মসুচি সভায় জানানো হয়, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ স্মরণ কর্মস‚চি পালিত হবে। ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারকে শহীদ পরিবারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাকিব মাহদী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, বগুড়া জেলার যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহিত তাকি। পদযাত্রা শেষে নেতৃবৃন্দ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন এবং সাতমাথা মোড়ে সমাবেশে অংশ নেন। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তারা বলেন, জুলাই সনদই হবে আগামী বাংলাদেশের রূপকাঠামো।