২ আগস্ট ২০২৫ শনিবার
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ বিষয়ে যা বলল দ্য ডন

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলছে এক গভীর রূপান্তর পর্ব। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী বেসামরিক সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সরকার বলছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা।

কিন্তু সেই পথে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকারই। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা ও দলের নিবন্ধন স্থগিত করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন একটি কড়া সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে লেখা সম্পাদকীয়টি পাঠকের জন্য এখানে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করে তুলে ধরা হলো—

এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রতিশ্রুত নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি করেছে।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা এবং দলটিকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যতই গুরুতর হোক না কেন, একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ অপরিহার্য।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও দেশের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে চাইলেই রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে মুছে ফেলা যায় না। বিশাল জনসমর্থন নিয়ে দলটি এখনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বাস্তবতা হিসেবে বিরাজ করছে। এই দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং বিপুলসংখ্যক ভোটারের ভোটাধিকার কেড়ে নেবে।

ভারতও এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে, তার নিজস্ব স্বার্থ থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—একটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকে বাদ দিলে তা পক্ষপাতের অভিযোগকেই জোরালো করে তুলবে। শুধু তাই নয়, এটি এমন এক সময়ে জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাবে, যখন এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ প্রতিশ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে পারে কি না, তা আন্তর্জাতিক মহল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মনে রাখা উচিত, তাদের প্রধান দায়িত্ব ‘শান্তিপূর্ণ ও বৈধ উপায়ে’ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন করা। ভোটের পথে না হেঁটে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি করা হলে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। ড. ইউনূসকে অবশ্যই আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিশ্রুতি প্রমাণ দিতে হবে।

নির্বাচনের একটি স্পষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে কেবল যে পরবর্তী সরকারের বৈধতাকে পোক্ত করবে, তা নয়; বরং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ঝুঁকিও কমাবে। ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হওয়া উচিত, আদালতের নির্দেশ কিংবা রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নয়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x