৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:১২ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

আদালতে প্রমাণ করতে হবে মাখোঁর স্ত্রী পুরুষ নন

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:১২ এএম

ইমানুয়েল মাখোঁ ও তাঁর স্ত্রী ব্রিজিত মাখোঁ একটি মার্কিন আদালতে প্রমাণ করতে চলেছেন যে ব্রিজিত একজন নারী। এই উদ্দেশ্যে তাঁরা আদালতে ছবি ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করছেন। ব্রিজিতের জন্ম পুরুষ হিসেবে হয়েছিল—এমন তথ্য প্রচার করেন ডানপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার ক্যান্ডেস ওয়েন্স। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মাখোঁ দম্পতি। তাঁদের আইনজীবী জানিয়েছেন, এই মামলায় তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করবেন। এদিকে ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করার জন্য একটি আবেদন করেছেন।

বিবিসির ‘ফেম আন্ডার ফায়ার’ পডকাস্টে মামলাটির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মাখোঁ দম্পতির আইনজীবী টম ক্লেয়ার জানান, এসব অভিযোগ ব্রিজিতের জন্য হতাশাজনক এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের জন্যও একটি বিরক্তির কারণ। তিনি বলেন, ‘আমি এটা বোঝাতে চাইছি না যে, এটি তাঁকে তাঁর কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তবে একজন ব্যক্তি যখন কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন সামলান আর তাঁর পরিবার যদি আক্রমণের শিকার হয়, তখন এটি তাঁকে ক্লান্ত করে ফেলে। দেশের প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি এর থেকে মুক্ত নন।’

ক্লেয়ার জানান, এ মামলায় বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য থাকবে, যা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে হবে। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করার জন্য মাখোঁ দম্পতি প্রস্তুত। ক্লেয়ার বলেন, ‘এটা ভাবতে অবিশ্বাস্য যে, আপনার নিজেকেই আপনাকে প্রমাণ করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, এটা এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে তাঁকে (ব্রিজিত) প্রকাশ্যে যেতে হবে। কিন্তু তিনি তা করতে রাজি। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য এবং এটি বন্ধ করার জন্য যা যা করা দরকার, তিনি তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

মাখোঁ দম্পতি ব্রিজিতের গর্ভবতী থাকাকালীন এবং তাঁর সন্তানদের লালনপালনের ছবি সরবরাহ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লেয়ার বলেন, সেই ছবিগুলো আছে এবং আদালতের নিয়ম ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো উপস্থাপন করা হবে। ক্যান্ডেস ওয়েন্স একজন সাবেক মার্কিন রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে। তিনি বারবারই ব্রিজিত মাখোঁ একজন পুরুষ—এ ধারণা প্রচার করে আসছেন। ২০২৪ সালের মার্চে তিনি দাবি করেছিলেন, এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য তিনি তাঁর ‘সুনাম’ বাজি ধরতে পারেন।

অভিযোগ প্রথম ২০২১ সালে ফরাসি ব্লগার অ্যামান্ডিন রয় ও নাটাশা রের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে ছড়িয়েছিল। এই দুই ব্লগারের বিরুদ্ধে করা একটি মানহানির মামলায় মাখোঁ দম্পতি ফ্রান্সে প্রাথমিকভাবে জয়লাভ করলেও ২০২৫ সালে সেই রায় আপিলে বাতিল হয়ে যায়। আদালত ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র দোহাই দিয়ে এই রায় দেন, সত্যতার ভিত্তিতে নয়। পরে মাখোঁ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

জুলাই মাসে মাখোঁ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয়, ‘ওয়েন্স তাঁর দাবির পক্ষে প্রমাণ না দিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মাধ্যমে আমাদের মানহানি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আইন অনুযায়ী মানহানির মামলায় অভিযোগকারীকে প্রমাণ করতে হয় যে, বিবাদী জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন অথবা সত্যের প্রতি চরম অবহেলা করে কাজ করেছেন। তাই মাখোঁ দম্পতিকে এখন প্রমাণ করতে হবে—ব্রিজিত একজন নারী।

গত আগস্টে ফরাসি ম্যাগাজিন প্যারিস ম্যাচকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমানুয়েল মাখোঁ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এটি আমার সম্মান রক্ষার বিষয়! কারণ এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন। এই ব্যক্তি জানতেন যে তিনি মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং এটি একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের সেবায় ও চরম ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংযোগের কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।

এদিকে ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজের জন্য একটি আবেদন করেছেন। তাঁদের যুক্তি হলো, মামলাটি ডেলাওয়ারে করা উচিত হয়নি, কারণ, তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে এই রাজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা দাবি করেন, ডেলাওয়ারে মামলাটি লড়তে বাধ্য হলে তাঁকে ‘আর্থিক ও অপারেশনাল ক্ষতির’ মুখে পড়তে হবে। এ বিষয়ে জানতে বিবিসি ক্যান্ডেস ওয়েন্সের আইনি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করেনি। ওয়েন্স এর আগে বলেছিলেন, তিনি যা বলছেন, তা সত্য।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x