২৬ জুন ২০২৫ বৃহস্পতিবার
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা আগামী সপ্তাহে, হতে পারে চুক্তি

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

ইরানের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে একটি চুক্তিও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা বলেছেন। ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ইরানের সঙ্গে এরপর কী হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান পরমাণু সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে পেরেছিল কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এগুলো সরানোর সময় ইরানের হাতে ছিল না। এগুলো খুবই ভারী। সরানো খুবই কঠিন।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যারা শান্তি চায় তাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। আলোচনা আবার শুরু হবে কিনা তা নির্ভর করবে ইরান এতে অংশ নিতে আগ্রহী কিনা তার ওপর। এরপর ট্রাম্প বলেন, ইরানের সঙ্গে আগামী সপ্তাহেই তারা আলোচনা করতে যাচ্ছেন এবং তারা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা প্রয়োজনীয়। তারা একটি যুদ্ধে ছিল, তারা লড়াই করেছে এবং এখন তারা নিজেদের জগতে ফিরে গেছে। কোনো সমঝোতা হলো কিনা তা আমি কেয়ার করি না। আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।

ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলার তুলনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, ১৯৪৫-এ জাপানের ওই দুই শহরে পরমাণু বোমা হামলা যে ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল, একইভাবে ইরানে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরানের ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। আমি হিরোশিমার উদাহরণ দিতে চাই না। আমি নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না। তবে দুই ক্ষেত্রেই মূলত একই ব্যাপার ঘটেছে। ওই হামলায় তখনকার যুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল। আর এই (ইরান) হামলায় এখনকার যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা করার কারণেই যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে দাবি করে ট্রাম্প বলেন, আমরা যদি এটা (ইরানে মার্কিন হামলা) না করতাম, তা হলে তারা (ইরান ও ইসরায়েল) হয়তো এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যেত। ন্যাটো সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, শুধু ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাই যুক্তরাষ্ট্রের হামলার একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। আরও দুটি টার্গেট ছিল যেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এবং সেগুলোতে শত শত মাইল দূরের সাবমেরিন থেকে হামলা করা হয়েছিল। এগুলো বিশ্বের গ্রেটেস্ট সাবমেরিন, এর ধারে কাছেও কেউ নেই।

তিনি তার বক্তৃতার শুরুতেই ইরানে হামলার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ‘ব্যাপক, সুনির্দিষ্ট হামলা’ হয়েছে। বিশ্বের আর কোনো সামরিক বাহিনী এটি করতে পারতো না। এখন আমেরিকান শক্তির এই অসাধারণ চর্চা শান্তির পথ খুলে দিয়েছে। তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন প্রতিরোধ করেছেন এবং একই সঙ্গে ‘আমেরিকান শক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন’।

তিনি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিও পড়ে শোনান, যেখানে বলা হয়েছে ‘পারমাণবিক স্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে’। কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার প্রসঙ্গ টেনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তেহরানকে এজন্য ‘সতর্ক’ করা হয়েছে। তিনি জানান, ওই ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোঁড়া ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের সবকটিই ভূপাতিত করা হয়েছে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এটম বোমা হামলার পরই জাপান আত্মসমর্পণ করেছিল। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই ঘটনার সঙ্গে গত ২২ জুন ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালায়। হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে চলা তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এই যুদ্ধবিরতি চলমান সংঘাতের অবসানের পথে নিয়ে যাবে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ‘প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যখন উভয় দেশ তাদের চলমান সামরিক অভিযান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেবে। এই যুদ্ধকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে নাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ঘোষণায় ধীরে ধীরে উভয় দেশের বৈরিতার অবসানের কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে’ এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে। মাকির্ন প্রেসিডেন্ট বলেন, এ যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি, এবং কখনও হবেও না! ঈশ্বর ইসরায়েলকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর ইরানকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যকে আশীর্বাদ করুন। ঈশ্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আশীর্বাদ করুন এবং ঈশ্বর বিশ্বকে আশীর্বাদ করুন!

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x