Site icon সারাবেলার খবর

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষ পরমাণু আলোচনা স্থগিত

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ দফার পরোক্ষ পরমাণু আলোচনা স্থগিত হয়েছে। আলোচনা কীভাবে এগোবে তা নিয়ে তেহরান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চলমান মতবিরোধের কারণে আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে বলে ইরানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এরই মধ্যে তিন দফায় আলোচনা হয়েছে। আগামী শনিবার (৩ মে) ইতালির রোমে চতুর্থ দফার আলোচনার হওয়ার কথা ছিল। মাত্র দুদিন আগে আলোচনা স্থগিত করা হলো। রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, ঊর্ধ্বতন এক ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে আলোচনার নতুন তারিখ ঠিক করা হবে।

কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা আলোচনার মধ্যে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, পরমাণু আলোচনা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিক উপায়ে বিরোধ মেটাতে সহায়ক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, আলোচনার পরবর্তী দফার তারিখ জানানো হবে।

ইরান জানিয়েছে, যৌক্তিক ও কৌশলগত কারণে মধ্যস্থতাকারী ওমানের সঙ্গে উভয় পক্ষ যৌথভাবে রোমে শনিবারের বৈঠক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওমান জানিয়েছে, পরমাণু নিয়ে দুই পক্ষের পরবর্তী আলোচনা প্রাথমিকভাবে ৩ মে করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু যৌক্তিক কারণে তারিখ নতুন করে ঠিক করা লাগবে।

আলোচনা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ দফার আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিতই করেনি। কবে, কখন ও কোথায় পরবর্তী দফার আলোচনা হবে তা এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। তবে শিগগিরই হবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

পরমাণু ইস্যুতে চলমান পরোক্ষ বৈঠকের মধ্যেই বুধবার ইরানের একাধিক জ্বালানি কোম্পানিকে লক্ষ্য করে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার ঘোষণা আসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কাছ থেকে। এখানেই শেষ নয়, পরদিন বৃহস্পতিবার (১ মে) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, ইরান থেকে যারা জ্বালানি কিনবে তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।

এছাড়া মার্কিন প্রতিমন্ত্রী পিট হেগসেথ ইরানকে সতর্ক করে বলেন, হুতিদের সমর্থন করার জন্য তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে। তবে অভিযোগ নাকচ করে তেহরান বলছে, হুতিরা স্বাধীনভাবে কাজ করে।

ইয়েমেনভিত্তিক গোষ্ঠীটি গাজায় ইসরাইলি হামলার জবাবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে লোহিত সাগরে ইসরাইল ও এর মিত্র দেশগুলোর জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে। পাল্টা ইয়েমেন বিমান হামলা চালাচ্ছে মার্কিন বাহিনী।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পরমাণু আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রর নিষেধাজ্ঞা ও হুমকি-ধামকির প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা অসঙ্গত আচরণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন। মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে যে কূটনীতির পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছা ও গুরুত্বের অভাব রয়েছে।

ইরানের পক্ষ থেকে পরমাণু আলোচনা স্থগিত করার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। সেগুলো হলো- প্রথমত, তৃতীয় দফার আলোচনার পরিবেশ পূর্ববর্তী আলোচনাগুলোর মতো ইতিবাচক ছিল না। আমেরিকান পক্ষের গুরুত্ব নিয়ে ইরানের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, চলমান আলোচনার মধ্যে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিকে তেহরান ভণ্ডামির লক্ষণ হিসেবে দেখছে। তৃতীয়ত, ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি, ড্রোন ক্ষমতা ও অন্যান্য প্রচলিত প্রতিরক্ষা খাতের ব্যাপারে রেড লাইন কঠোরভাবে মেনে চলছে।

চতুর্থত, বিশেষ কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ইরান স্বল্প সময়ের মধ্যে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ত্যাগ করতে পারে না। এছাড়া আলোচনা স্থগিতের ঘোষণাও একটি আলামত যে, ইরান নিরর্থক আলোচনায় জড়িত হতে চায় না।

Exit mobile version