কক্সবাজার প্রতিনিধি
ঈদুল আজহার টানা ছুটির প্রথমদিনে পর্যটকের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও দ্বিতীয়দিন রবিবার থেকে সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। এতে সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৫০ শতাংশের বেশী কক্ষ বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের হিসেবে মতে রবিবার কক্সবাজারে আগত পর্যটকের সংখ্যা ৬০ হাজারের কমবেশি। তারা বলছেন, সোমবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কক্সবাজারে আগত পর্যটকের পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে রবিবার দিনভর দেখা মিলেছে ঈদের আনন্দ উপভোগকারি স্থানীয় জনগনকে। যারা পর্যটকের সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়েছে গেছে সৈকতের বালিয়াড়ি, সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে শরীর ভেজানো সহ অন্যান্য উপভোগে।
কক্সবাজারের আবহাওয়া ২ দিন ধরে তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম। এমন পরিস্থিতি সাগরও একটু স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে উত্তাল থাকার তথ্য জানিয়েছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। যেখানে সমুদ্র স্নানে ঝুঁকির বিবেচনায় টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। এই লাল পতাকা সমুদ্র স্নানে সর্তকতার কথা বলা হলেও তা মানছেন না পর্যটক সহ সৈকতে ভ্রমণকারিরা।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, রবিবার কক্সবাজারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতাঃ ৬৫%। তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা উভয়ই বেশি থাকার জন্য অত্যাধিক গরম অনুভূত হচ্ছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্ব পালন করা সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, তীব্র রোদ সাগরও উত্তাল। ৩টি পয়েন্টেই গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাই সৈকতের বালুচরে লাল পতাকা টানানো হয়েছে পর্যটকদের সতর্ক করতে। কিন্তু কেউ তো তা মানছেন না। তাই লাইফ গার্ড কর্মী সব্বোর্চ সতর্ক রয়েছে। সমুদ্রস্নানে দূর্ঘটনা এড়াতে ৩ স্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রবিবার (০৮ জুন) বেলা ১১ টা, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাগর অনেকটায় উত্তাল, সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। তার ওপর পড়ছে তীব্র রোদ। যার কারণে সৈকতের বালুচরে টানানো হয়েছে লাল পতাকা। কিন্তু ঈদ আনন্দ মানে না এসব বাধা। তাই তো ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছুটে এসেছে হাজার হাজার পর্যটক। যারা সকল বাধা উপেক্ষা করে মেতেছেন ঈদ আনন্দে।
সৈকতের ৩টি পয়েন্টের নোনাজলে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক মেতেছেন সমুদ্রস্নানে। অনেকেই টিউবে গা ভাসিয়েছে কেউবা ব্যস্ত প্রিয় মুহুর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে। নোনাজলে যেন অনেকেই প্রশান্তি খুঁজছেন। নোনাজল থেকে উঠে অনেক পর্যটক খেলছেন বালুচরের বালু নিয়ে, তৈরি করছেন বালির ঘর। আর ঢেউ এসে ভেঙ্গে দিচ্ছে বালির ঘরটি। অনেক পর্যটক চড়ছেন ঘোড়ার পিঠে কিংবা বিচ বাইকে। অনেকেই কিটকটে বসে উপভোগ করছেন সমুদ্র। এভাবে আনন্দে মেতে রয়েছেন ভ্রমনপিপাসুরা।
ঢাকা থেকে আসা মীর মাহবুব বলেন, টানা ছুটিতে পরিবারকে সময় দিতে কক্সবাজার ছুটে এসেছি।।এখানে এসে সমুদ্রস্নান, ছবি তোলা থেকে শুরু করে ঘোড়া চড়ে মজা করছি। তীব্র গরম, তারপরও মনে হচ্ছে আবহাওয়া অনেক ভাল।
আরেক পর্যটক সোয়েব করিম বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় লাল পতাকা টানানো হয়েছে বালুচরে। কিন্তু ঈদ আনন্দ কি এসব মানে। তাই সমুদ্র নেমে গোসল করছি, আনন্দে মেতে রয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটি উদযাপনে এবার কক্সবাজার ছুটে এসেছি। এখানে সাগরের সামনে পরিবার নিয়ে আনন্দ করছি।
আরেক পর্যটক ইব্রাহীম বলেন, ঈদের দিন সৈকতে পর্যটক কম হবে মনে করেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি বিকেলে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। তবে সাগরপাড়ে মানুষ বেশি থাকলে আনন্দও বেশি করা যায়।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, ঈদের প্রথমদিন পর্যটক উপস্থিতি তেমনটা ছিল না। দ্বিতীয়দিন থেকে পর্যটক সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। এতে সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৫০ শতাংশের কক্ষ বুকিং রয়েছে। সোমবার শতভাগ হোটেল কক্ষ বুকিংয়ের আশা তাদের।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাশ বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমনকে আনন্দমুখর করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষনের পাশপাশি সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে পুলিশ অবস্থান করছে। একদিকে মোবাইল টিম অন্যদিকে সাদা পোশাকে পুলিশ সমুদ্র সৈকতে ঘুরছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, ঈদের ছুটিতে একাধিক মোবাইল টিম পর্যটকদের সকল ধরনের হয়রানি রোধে মাঠে কাজ করছে।
এদিকে, শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, আগত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনিন্দ্য সুন্দর মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, রামুর বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, শহরের বার্মিজ মার্কেট, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এবং ডুলাহাজার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো।