৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩০ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ঋণের দায়ে চার মৃত্যু, সেই ঋণ করেই ১২০০ মানুষকে খাওয়াল পরিবার

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩০ পিএম

রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রাম থেকে গত ১৫ আগস্ট স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। যেখানে লেখা ছিল, আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন মিনারুল। উদ্ধার হওয়া চিরকুটেও লেখা ছিল তেমন কথা। যে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছেন মিনারুল। সেই ঋণ করেই মিনারুল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য চল্লিশার আয়োজন করেছেন মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী। লাখ টাকা ধার করে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এমন আয়োজন করেন তিনি। চল্লিশা অনুষ্ঠানে খাওয়ানো হয়েছে প্রায় ১২০০ মানুষকে।

সরেজমিন বামনশিকড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে চড়ে দূরের গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজনেরা আসছেন। উপস্থিত ছিল গ্রামের মানুষ। রুস্তম আলীর বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলে বসে খাচ্ছেন সবাই। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল ও মুড়িঘণ্ট। রুস্তম আলী ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছিলেন। এর এক ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।

রুস্তম আলী বলেন, এই অনুষ্ঠানকে কেউ চল্লিশা বলে। কেউ বলে ফয়তা। সমাজের মানুষকে নিয়ে এটা করতে হয়। বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। আমিও মনের আবেগে করলাম। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ, মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি।

তিনি বলেন, আশপাশের মানুষজন বলছিল, চারজন মরার কারণে বাড়ি ভারি ভারি লাগছিল। ছোট বাচ্চারা ভয় পাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটা করলাম যাতে ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। এ কারণে দুপুরে দোয়া হয়েছে। তারপর খাওয়া-দাওয়া। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হলো। আত্মীয় স্বজন ও সমাজের মিলিয়ে ১২০০ মানুষের আয়োজন করা হয়েছে।

টাকা জোগাড় হলো কীভাবে জানতে চাইলে রুস্তম আলী বললেন, সবই ধারদেনা। আমার তো জমানো টাকা নাই। শোধ করবেন কীভাবে, এ প্রশ্নে বলেন, ১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচব, বেচে ধার শোধ করব। এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নাই। কিন্তু, কেউ মারা গেলে এটা করতে হয়। এটা আমাদের এলাকার একটা প্রথা।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x