এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) গত বছর থেকে মহিলা ক্লাব পর্যায়েও টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। প্রথম আসরে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব অংশ নেয়নি। ২৩-৩১ আগস্ট দ্বিতীয় আসরের জন্য আজ ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভারতের ইস্ট বেঙ্গল, নেপালের এপিএফ ও ভুটানের রয়েল থিম্পু কলেজ থাকলেও নেই বাংলাদেশের কোনো ক্লাব।
গতকাল বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নারী ফুটবলে এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করেছে। জাতীয় দলে এখন বাংলাদেশ এশিয়ার শীর্ষ ১২ দলের একটি। অথচ সেই দেশের কোনো ক্লাব নেই এএফসি মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ এ নিয়ে বলেন, ‘নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাব গত লিগে চ্যাম্পিয়ন। তারা খেলার মতো ছিল কিন্তু এএফসি টুর্নামেন্টে খেলতে হলে ঘরোয়া লিগে দশটি দল এবং প্রত্যেককে নয়টি করে ম্যাচ খেলতে হয়। আমাদের দল ছিল নয়টি আর খেলা হয়েছে আটটি করে।’
বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ এএফসি নির্বাহী কমিটির সদস্যও। এক সময় তিনি এএফসির মহিলা উইংয়েরও প্রধান ছিলেন। ফলে এএফসির নারী ফুটবলের সূচি ও পরিকল্পনার বিষয়টি ভালো করেই জানা তার। এরপরও সেই অনুযায়ী ঘরোয়া লিগ আয়োজন করে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবকে টানা দুই বার এশিয়ান মঞ্চে খেলার মতো তৈরি করতে পারেননি।
গত বছর প্রথম আসর হওয়ায় এএফসি অনেক কিছুতেই শিথিলতা দিয়েছিল। কোনো ক্লাব অংশগ্রহণ করবে কি না সেটা ক্লাবের সিদ্ধান্ত। বাফুফে গত বছর ক্লাবকে খেলার আমন্ত্রণ বা সুযোগের বিষয়টি জানায়নি। নিজেরাই না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এতে বাফুফের তৎকালীন সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক অত্যন্ত নাখোশ হয়েছিলেন। কিরণও খানিকটা সমালোচনার মধ্যে পড়েছিলেন।
এএফসি লিগে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব নেই অথচ নামকওয়াস্তে লিগ খেলেই বাফুফের ২০২৪ সালের নির্বাচনে চারটি ক্লাবের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছিল ঠিকই। নারী লিগের শীর্ষ চারটি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ প্রদানের জন্য বাফুফে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা করেছিল। দেশের ফুটবলে অবদান রাখা পাইওনিয়ার ক্লাবের কোনো ভোটাধিকার নেই, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের সকল ক্লাবেরও নেই ভোটাধিকার অথচ মাত্র সাত-আটটি ম্যাচ খেলে ঠিকই ভোটাধিকার পেয়েছে গত নির্বাচনে। এর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল কিরণের।
বাফুফে নারী লিগ আয়োজন করেছে সেই গত বছর মে-জুন মাসে। ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন কমিটি এসেছে। এই কমিটি আসার পর বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে কিরণ একবার প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ও গত নারী লিগে খেলা ক্লাবগুলোকে নিয়ে একটি সভা করেছিল। এরপর আর কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। নারী লিগ নিয়ে কিরণ বলেন, ‘আমরা নভেম্বরের দিক লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি। লিগে অংশগ্রহণের শর্ত, যোগ্যতা ইতোমধ্যে নির্ধারণ হয়েছে। সেগুলো পূরণ করেই খেলতে হবে।’
ফুটবল সারা বিশ্বে ক্লাব নির্ভর খেলা। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়ার গন্ডি পেরিয়ে এখন এশিয়ান মঞ্চে। নারী ফুটবলাররা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লিগ খেলার সুযোগই পান না। আবাহনী, মোহামেডান আগেই নারী দল সরিয়ে নিয়েছে। বসুন্ধরা কিংসও নানা কারণে নারী ফুটবলে দল গঠন করেনি গত বছর। ক্লাবগুলোর যেমন অনীহা রয়েছে তেমনি ফেডারেশনও এটি অন্য কোনো উপায়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ফুটবলারদের বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে লিগকে পরিগণিত করতে পারেনি।
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কে স্পোর্টসের মাধ্যমে নারী ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল বাফুফে। কে স্পোর্টসের স্বত্ত্বাধিকারী ফাহাদ করিম ও বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ মাঝে মধ্যে ২০২৩ সালে বেশ কয়েকবার আশার বাণী শোনালেও বাস্তবে আর আলোর মুখ দেখেনি সেই লিগ। এই ফ্রাঞ্চাইজ লিগের জন্য বাফুফে নারীদের বিদেশের লিগের ছাড়পত্র দেয়নি। এতে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ ছিল ফুটবলারদের।