১ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১২:২৬ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

কাকন বাহিনীর আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযান, অস্ত্রসহ আটক ৩

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১২:২৬ এএম

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া এবং পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর সন্ত্রাসী বাহিনী আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা কাকন বাহিনীর আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। এসময় তিনটি বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদকদ্রব্য, একটি মাথার খুলি, ১২ লক্ষাধিক নগদ টাকা সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নানা সরঞ্জামাদী উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজি ও অবৈধ বালু মহলের টাকার ভাগবাটোয়ারার তালিকা উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাট, লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেনাবাহিনীর পাবনা ও নাটোর ক্যাম্পের সদস্যরা এই অভিযান পরিচালনা করেন।

আটককৃতরা হলেন- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার সাতবাড়িয়ার দক্ষিন ভবানীপুরের মৃত আজিজুল হকের ছেলে ও আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের ভায়রা ভাই মেহেফুজ সোহাগ (৪০), ঈশ্বরদীর আরমবাড়িয়ার মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি (৩০), লালপুরের কাইগি মারির চর এলাকার ভাষানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৫৫)। আটকৃতরা আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের লোক বলে জানা গেছে।

বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈম্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর, নাটোরের লালপুর সহ বিভিন্ন এলাকার বালু মহলের নিয়ন্ত্রণ করছেন লালপুরের সন্ত্রাসী বাহিনীখ্যাত ‘কাকন বাহিনী’। অধিকাংশ ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিলেও সাড়া ঘাটের বৈধ ইজারাদার থাকায় সেই ঘাট নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়। এই ঘাটে গত ৫ জুন ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী, যারা সারা দেশে ভাইরাল হয় এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকদিন থেমে ছিল।

সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার সকালে আবারও ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী। স্পিডবোর্ড ও নৌকার মাধ্যমে এসে এলোপাথারি গুলি চালায়। এসময় ঘাস কাটতে গিয়ে গরুর রাখাল সোহান হোসেন গুলিবিদ্ধ হোন। এমন বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে সেনাবাহিনী আজকে বড় ধরেনর অভিযান চালায়।

অভিযানে বিদেশি তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশী রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, নির্যাতনের স্টিমরোলার, গোলাবারুদ, পেন্সিডিল, ইয়াবা, গাজার গাছ, মোবাইল, সিমকার্ড, মাথার খুলি, ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও নাটোরে ডিসি, সার্কেল এসপি, নৌ পুলিশ, থানার ওসি, টহল পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাশোয়ারার টাকা কে কত পার্সেন্ট, প্রতিদিন, সপ্তাহে ও মাসে পান সেসবের দুটি ভলিউম বই ও উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতদের দেয়া তথ্য এবং উদ্ধার হওয়া তালিকায় দেখা গেছে, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশকে মাসে ৪ লাখ টাকা, নাটোরের ডিসিকে মাসে এক লাখ টাকা, সার্কেল এসপিকে ৫০ হাজার টাকা ও বাগাতিপাড়া থানার ওসিকে ২৫ হাজার টাকা, নাটোরের এখন টেলিভিশনের সাংবাদিককে ২৫ হাজার টাকা, এশিয়ান টেলিভিশনের পায়েল হোসেন রিন্টুকে সপ্তাহে ৫ হাজার করে দেওয়া হয়।

অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈশ্বরদী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-অপতৎপরতা নির্মূলে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আটক মেহেফুজ সোহাগ ও বাপ্পি বলেন, আমরা এখানে নৌকা চালাই ও ক্যাশিয়ারের কাজ করি। কাকনবাহিনী এই অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে রাতে মাদক সেবন ও বিক্রি, অস্ত্র কারবারি ও নারীদের নিয়ে এসে আনন্দ ফূর্তি করা হয়। কাকন বাহিনীর লোকজনের বাড়ি থেকে বিদেশি অস্ত্র, দেশী অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, নগদ টাকা সহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি পেয়েছে। এগোলো দিয়ে কাকন বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে।

রাজশাহীর বাঘার বালু মহলের বৈধ ইজারাদার মিজানুর রহমান সরকার বলেন, আমরা সরকারের থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছি। কয়েক বছর ধরেই কাকনবাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিটি নৌকা থেকে জোরপুর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। টাকা দিতে না চাইলে নৌকা যেতে দেয় না। আজকে সেনাবাহিনীর অভিযান ঐতিহাসিক অভিযান বলে মনে করছি। সেনাবাহিনীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

নাটোরের লালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিমুনজ্জান বলেন, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশ এজাহার দিলে মামলার মাধ্যমে গ্রেফতার দেখিয়ে নাটোরের কারাগারে পাঠানো হবে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আজিম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নেওয়া হবে বলে ফোন কেটে দেন। নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন বলেন, আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। আমার সার্কেল অফিসার ও দুই ওসির ব্যাপারে যেটি বললেন ডকুমেন্টসগুলে দেন, এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x