২৮ জুন ২০২৫ শনিবার
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

কোরআন পরিপূর্ণভাবে না মানলে আল্লাহর শাস্তি অবধারিত: ডা: শফিকুর রহমান

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান

কোরআনভিত্তিক সমাজ ব্যব্যস্থা গড়তে হলে কোরআন পরিপূর্ণভাবে মানতে হবে নতুবা আল্লাহর শাস্তি অবধারিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কোরআন কিছু অংশ মানবো, আর কিছু অংশ মানবো না, এটা মুমিনের বৈশিষ্ট হতে পারে না। কোরআনের পরিপূর্ণ অনুসরণই বৈষম্যহীন শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের একমাত্র পথ। তিনি শুক্রবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর কুদরত উল্লাহ জামে মসিজদ কমপ্লেক্সে নুর ফাউন্ডেশন আয়োজিত অর্থসহ আমপারা মুখস্থ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যেখানে আল্লাহ নবী পাঠান নাই। কুরআনের ভাষা বিশ^ নবীর ভাষা। কোরআনই একমাত্র কিতাব, যেটা পৃথিবীর সকল ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বাইবেলে হাত লেগেছে, কিন্তু কোরআনের একটি অক্ষরেও হাত লাগে নাই। এটা কোরআনের সবচেয়ে বড় মুযিজা। আমীরে জামায়াত বলেন, বিশ^নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে কোরআন নাযিল হয়েছে। কিন্তু তিনি কোরআনের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছেন। কেউ প্রমাণ করতে পারে নাই, তিনি কোরআনের বাইরে বেড়ে ওঠেছেন। কারণ আল্লাহপাক তাঁকে কোরআনে মোতাবেক গড়ে তুলেছেন।

নুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন নূরের সভাপতিত্বে এবং আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের সেক্রেটারী হাফিজ মিফতাহুদ্দীনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব শায়খ সাঈদ নুরুজ্জামান আল মাদানী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, দি সিলেট ইসলামী সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলুর রহমান, দাওয়াতুল ইসলাম ইউকের প্রাক্তন আমীর হাফিজ শফিকুর রহমান মাদানী, ইকরা ইন্টারন্যাশনাল ইউকের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজির আহমদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ও জাতীয় ইমাম সমিতির মহাসচিব শাহ নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান শেষে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান ক ও খ গ্রুপের প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিকারী প্রতিযোগিতার হাতে নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এর বাইরে দুই গ্রুপ থেকে ৭ জন করে মোট ১৪ জনকে নগদ ৫ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, নুর ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অর্থসহ আমপারা মুখস্ত প্রতিযোগিতায় ৫ শতাধিকেরও বেশি প্রতিযোগি অংশগ্রহণ করেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কূটনীতিকরা আমাদেরকে নানা প্রশ্ন রাখেন। তারা জানতে চান, আমরা ক্ষমতায় গেলে পোশাক কোড কী হবে, মাইনরিটি ও নারীর অধিকার কী হবে। আমরা তাদেরকে কোরআন মোতাবেক যতটুকু জানি, ততটুকু বলেছি। তাদেরকে বলেছি, আপনারাও কোরআন পড়তে পারেন।

বেশরিভাগ কূটনীতিকই খ্রিস্ট্রান সম্প্রদায়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদেরকে বলি বাইবেল পড়েছেন কি না, তারা কেউই বাইবেল পড়েনি বলে জানায়। তখন আমি তাদেরকে বলেছি, আমি কিন্তু আপনাদের বাইবেল পড়েছি। আপনারা কোরআন পড়তে পারেন। সেখানে কী ম্যাসেজ দেওয়া আছে, সেটা জানতে পারেন। অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরনা তাদেরকে কোরআন দিয়েছি। তারা জানার চেষ্ঠা করছে। তিনি কোরআন ও ইনসাফ ভিত্তিকে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কোরআন শিক্ষার উপর জোর দেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, নুর ফাউন্ডেশনের অর্থসহ আমপারা মুখস্ত প্রতিযোগিতার আয়োজন চমৎকার ও অনন্য বলে মন্তব্য করেছেন। আমরা সাধারণত কোরআন হিফজ ও তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন দেখি। কিন্তু কোরআন বুঝে পড়া ও মুখস্ত করার এই আয়োজন ব্যতিক্রম অনন্য ও অসাধারণ। এই আয়োজন আমাদের চোখ কুলে দেওয়ার মতো।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, কোরআনকে সত্যিকার অর্থে ধারণ করতে হবে। আমাদেরকে মুক্তি পেতে হলে কোরআন অনুযায়ী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই ধরণের প্রতিযোগিতা কোরআনভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিক পালন করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দি সিলেট ইসলামি সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলুর রহমান বলেন, শব্দে শব্দে কোরআন বুঝে পড়তে হবে। তাহফিজুল কোরআন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যেসব মাদ্রাসা রয়েছে, সেখানে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমার জানামতে, সেখানকার ছাত্ররা হিফজ করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এটা সকল মাদ্রাসায় চালু করা উচিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ও জাতীয় ইমাম সমিতির মহাসচিব শাহ নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে কোরআন চর্চার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, তবে কিছু ঝামেলাও আছে। কোরআন বুঝেশুনে অর্থসহ পড়ার চর্চা কম, এটা বাড়াতে হবে। কোরআন বুঝেশুনে পড়ার কথা বললে অনেক আলেমও বিরোধিতা করেন, এই নজিরও আছে। তিনি বলেন, কোরআন বুঝতে হবে। বুঝেশুনে পড়লেই কোরআন ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কোরআনের চর্চা বাড়ালেই সুদ ও ঋণমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দাওয়াতুল ইসলাম ইউকের প্রাক্তন আমীর হাফিজ শফিকুর রহমান মাদানী বলেন, কোরআন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোরআন বুঝে পড়ার এই আয়োজন চমৎকার। এই ধরণের আয়োজনে কোরআনভিত্তিক তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইকরা ইন্টারন্যাশনাল ইউকের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, বর্তমান অশান্তিময় সমাজে কোরআন থেকে মূলনীতি নিলে সমাজে শান্তি আসবে। বিশে^ ২শ কোটি মুসলমান থাকার পরেও নির্যাতিত। কারণ মুসলমানরা কোরআন থেকে দূরে সরে গেছে। তিনি এই আয়োজনকে ব্যতিক্রম ও অনন্য বলে মন্তব্য করেন।

সভাপতির বক্তব্যে নুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন নূর বলেন, নুর ফাউন্ডেশন সংগঠন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সংগঠনের মূল লক্ষ্য ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার। ভবিষ্যতে বাবার নামে শিক্ষাবৃত্তি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষক পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সিলেট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সিলেট ওমেন্স কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। কওমী অঙ্গনেও তিনি জড়িত ছিলেন। তাই এধরণের আয়োজনের মাধ্যমে ইসলামী ধারার সবাইকে এক করতে চাই। যেই চেষ্টা জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানও করে যাচ্ছেন।

মুকতাবিস উন নূর বলেন, ভবিষ্যতে নুর ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সর্বোপরি মানবাতার কল্যাণে কাজ করাই এই ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য। কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিযোগিতার পরিচালক ও কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের খতিব সাঈদ বিন নূরুজ্জামান।

ক গ্রুপে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী সিলেট আইডিয়াল মাদ্রাসার ছাত্র মো. আবু সায়েম নগদ ২০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র, দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী আল আমিন জামেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী নাজিহা সুলতানা নাজা নগদ ১৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র এবং তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র শাকের সালেহ আব্দুল্লাহ নগদ ১০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র পান।

খ গ্রুপে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র এমাদ আহমদ নগদ ২৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র, দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী আল মদিনা ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মুজতাহিদ নসগদ ২০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র, এবং তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী জাময়ো মাছুমিয়া ইসলামিয়া মাছিমপুর মাদ্রাসার ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নুমান নগদ ১৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র লাভ করেন।

এই ৬ প্রতিযোগীকে মোট ১ লাখ ৫ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৪জন প্রতিযোগীকে ৫ হাজার করে মোটন ৭০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, নুর ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অর্থসহ আমপারা মুখস্ত প্রতিযোগিতায় ৫ শতাধিকেরও বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x