২৭ আগস্ট ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গুরুত্ব পাচ্ছে না

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৫ পিএম

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আগামীতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসে কমিশনের সুপারিশ আমলে নেয় কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। সাংবাদিক সংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলাদলিতে ব্যস্ত। গণমাধ্যম সংস্কার না হলে বিজ্ঞাপন খাতের অরাজকতা কাটবে না। গণমাধ্যম স্বনির্ভর হতে পারবে না। ব্যাহত হবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। তাই সংশ্লিষ্টদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা হলে গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে। মঙ্গলবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

কর্মশালায় পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংস্কার বিষয়ে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)। ২০২৫ থেকে ২০৩০ মেয়াদে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংস্কারের এ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে এমআরডিআইকে সহযোগিতা করেছে ডেনমার্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া সাপোর্ট (আইএমএস)।

অনুষ্ঠানে কর্মপরিকল্পনার ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কৌশলগত প্রণয়নবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য নাদিয়া তাবাসুম খান এবং এমআরডিআইয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দ সামিউল বাসার অনিক। তারা বলেন, কর্মপরিকল্পনায় জরুরি অগ্রাধিকার, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে সমন্বিত রূপরেখা। এর মাধ্যমে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি সমন্বিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশে মুক্ত, স্বাধীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই সংবাদমাধ্যমের পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সাংবাদিক সংগঠনগুলোও বলছে না এখনই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রেস কাউন্সিল বাদ দিয়ে স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের কথা বলা হচ্ছে। সরকার সেই সুপারিশ না শুনে প্রেস কাউন্সিল পুনর্গঠন করেছে। কমিশন শ্রম আইন অনুসরণ করতে বলেছে, সরকার তা না করে গণমাধ্যম কর্মী আইন করতে চাইছে, যেটার প্রয়োজন নেই।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, আগামীতে যেই ক্ষমতায় আসুক, তারা কমিশনের সুপারিশ ততটুকই বাস্তবায়ন করবে, যতটুকু সুবিধা হবে।

দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রায় ছয় মাসে আগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় এমন সুপারিশ আলাদাভাবে সরকারকে দেওয়া হয়েছে। অন্য কমিশন নিয়ে তোড়জোড় থাকলেও গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

ইউনেস্কো বাংলাদেশ অফিসের প্রধান ড. সুসান ভাইজ বলেন, সরকার সব করে দেবে, সেই আশায় বসে না থেকে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তখন সরকার সহযোগিতা করতে বাধ্য হবে।

ঢাকা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, সরকারের ইনস্টিটিউশনগুলো অনেক শক্তিশালী। তারা লাইসেন্স দেওয়া, বিজ্ঞাপন হার ঠিক করাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য কমিশনের সুপারিশে এগুলো নিয়ন্ত্রণে সব অংশীজনের প্রতিনিধিসহ কার্যকর কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা নেই। অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেই অনেক সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারত। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনার চমৎকার সুযোগ ছিল। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ওয়াদা নেওয়া যেত, তারা ক্ষমতায় গেলে কোন কোন সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম আর্থিকভাবে স্বনির্ভর নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধার জন্য মিডিয়া তৈরি করেছেন। হয় মালিকের কথা শুনতে হবে, না হয় পুঁজির কাছে (বিজ্ঞাপন) যেতে হবে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোও বিভক্ত, তারপরও কথা চালিয়ে যেতে হবে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কুররাতুল আইন তাহমিনা বলেন, গণমাধ্যম আর্থিকভাবে গভীর সংকটে রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, কমিশনের সব সুপারিশ বাস্তবায়নের সামর্থ্য সরকারের নেই। এ ছাড়া রয়েছে আমলাতন্ত্রের চাপ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x