২৭ জুলাই ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ৫:৪২ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

গাকৃবিতে উদ্ভাবিত নতুন ‘জিএইউ ধান-৩ সম্ভাবনার এক অভাবনীয় সংযোজন

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ৫:৪২ পিএম

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রখ্যাত প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী এর নেতৃত্বে গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি উদ্ভাবিত হয়েছে একটি নতুন ধানের জাত ‘জিএইউ ধান-৩’। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের পর এটিই প্রথম নতুন জাত হিসেবে নিবন্ধিত হলো, যা গাকৃবির গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।

প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই নতুন জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি ও মানের দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এ জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯০টি তে পৌঁছালো যা বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলো। গাকৃবির গবেষণা মাঠে দীর্ঘ ৪ বছর গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের এ জাতটি মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী কর্তৃক প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ২০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এ জিএইউ ধান-৩ এর ছাড়পত্র দেয়।

এ ধানে আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। চালে অধিক জিঙ্ক এবং লৌহ রয়েছে যা মানুষের শরীরকে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধী করে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে তেমনি শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। দানা চিকন ও লম্বা এ জিএইউ ধান-৩ তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ব হয়, আমন মৌসুমে প্রায় ৩ মাস এবং বোরো মৌসুমে সাড়ে ৩ মাস পর উৎপাদন পাওয়া যায় যার ফলে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

অন্যদিকে এ ধানের গাছের আকার বড়, কান্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায় ফলে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাধারণ জাতের তুলনায় এটি গড়ে ১৫% বেশি ফলন দিতে সক্ষম যা বাংলাদেশের মতো ধান নির্ভর কৃষিভিত্তিক দেশে এর উপযোগিতা অনেক। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টন থেকে ৬ টন যা একে অন্যান্য জাতের ধান থেকে বিশেষ স্থানে নিয়ে গিয়েছে। এতে উপস্থিত অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমের পরিমাণ শতকরা ২৬ ভাগ যা শরীরে শর্করা জাতীয় খাবারগুলোকে সহজে ভেঙে শরীরে শক্তি সরবরাহ ও হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

আবার সাধারণ চালের তুলনায় এতে জিঙ্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। সুবাসযুক্ত ধানটি রান্নার সময় মনোহর সুবাস ছড়ায় ফলে ভোক্তাদের কাছে এর চাহিদা বাড়াবে। এছাড়া জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ-পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এটি দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে চাষের জন্য উপযোগী ও লাভজনক একটি জাত। সার্বিক বিষয়ে জিএইউ ধান-৩ এর উদ্ভাবক ড. আইভী বলেন, “আজকের বিশ্বে খাদ্যের পরিমাণের পাশাপাশি গুণগত মানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অপুষ্টি ও খনিজ ঘাটতি দূর করতে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।


জিএইউ ধান-৩ কেবল একটি নতুন জাত নয়, এটি পুষ্টি, উৎপাদন ও কৃষকের আর্থিক উন্নয়নের মাঝে একটি শক্ত সেতুবন্ধন। রপ্তানীযোগ্য এই জাতের মাধ্যমে দেশে পুষ্টিনির্ভর কৃষি বিপ্লবের সুস্পষ্ট সূচনা হয়েছে বলেও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।” গাকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান এর অনুভূতি আরও গর্বিত করে তোলে এই সাফল্যকে। ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, “জিএইউ ধান-৩ শুধু একটি জাত নয়, এটি আমাদের কৃষি গবেষণার গৌরবময় প্রতীক। ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এটি অপরিসীম অবদান রাখবে।” উল্লেখ্য, এর আগে ড. আইভী লাল ও হলুদ পেঁপের ৪টি এবং ধান, টমেটো, লাউ, মটরশুঁটির ২টি করে মোট ১৩টি জাতের সফল উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ প্রধান মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x