গাজা অভিমুখী মানবিক নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কনশানস’ থেকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী, লেখক ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমকে অপহরণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে নৌবহরের কনশেনস নামের জাহাজকেও ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে। জাহাজে ৯৩ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মী রয়েছেন। বুধবার (৮ অক্টোবর) ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানিয়েছে, গাজামুখী তাদের নৌ-বহরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। একই সঙ্গে কয়েকটি জাহাজও আটক করেছে তারা। বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ‘কনশেনস’ নামের যে জাহাজটিতে ছিলেন, সেটিতেই প্রথম হামলা চালানো হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযান নিশ্চিত করেছে। তাদের দাবি, বৈধ নৌ অবরোধ ভাঙা এবং যুদ্ধাঞ্চলে প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জাহাজ এবং যাত্রীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সবাই নিরাপদ এবং সুস্থ, দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে।
গাজায় চলমান মানবিক সংকটের প্রেক্ষিতে যাত্রা শুরু করা ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক নৌবহরে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। বহরের উদ্দেশ্য ছিল মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া এবং অবরোধ ভেঙে গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তবে নৌবহরের নিরাপত্তা ও আইনি অবস্থান নিয়ে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া চলছিল। বহরের সদস্যরা বারবার জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য শাস্ত্রবিহীন সহিংসতা নয়, বরং মানবিক ত্রাণ পৌঁছানো। বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় শহিদুল আলম নিজেই জানিয়েছেন, তাকে ইসরায়েলি বাহিনী সমুদ্রে আটক করেছে।
ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। আপনি যদি এই ভিডিওটি দেখে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে আমাদের সমুদ্রে আটক করা হয়েছে। আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আমি আমার সকল কমরেড ও বন্ধুদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যান।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে শহিদুল আলম জানিয়েছিলেন, বুধবার ভোর নাগাদ তারা রেড জোন অর্থাৎ ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত বিপজ্জনক সমুদ্রসীমায় পৌঁছে যেতে পারেন। তিনি লিখেছিলেন, আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি, কারণ ছোট ও ধীরগতির নৌযানগুলো যেন পেছনে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে আমরা অপেক্ষা করছি। এগুলোও ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের অংশ। এখন আমরা ‘রেড জোন’ থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে আছি, সেই অঞ্চল যেখানে আগে ইসরায়েলি বাহিনী অবৈধভাবে ফ্লোটিলা আটক করেছিল।
এর আগেও ২০১০ ও ২০১৮ সালে গাজায় মানবিক ত্রাণ বহনকারী ফ্লোটিলা নৌবহরগুলোকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবরুদ্ধ ও আটক করেছিল ইসরায়েলি সেনারা। এবারও একই ধাঁচে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কনশানসের বেশ কয়েকটি নৌযানকে ঘিরে রেখেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক সংগঠনগুলো গাজায় সংবাদকর্মীদের ওপর চলমান হামলা ও আটক অভিযানে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, এবং বহু সাংবাদিক আটক রয়েছেন—এমন তথ্য জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। শহিদুল আলমের আটক বা অপহরণের ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকে তাঁর নিরাপদ মুক্তি ও ফ্রিডম ফ্লোটিলায় থাকা অন্য অধিকারকর্মীদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন।