৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪:৩২ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশ : ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪:৩২ পিএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দখলদার ইসরায়েলের তীব্র বোমাবর্ষণে আবারও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতভর চালানো অভিযানে অন্তত আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই একই পরিবারের সদস্য, যাদের বাড়িঘর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। খবর আল জাজিরা’র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্র ও তাঁবুতে অবস্থান করা বাস্তুচ্যুত মানুষরাও হামলার শিকার হয়েছেন। গাজার সাবরিন আল-মাবহুহ জানান, “আমার ভাই, তার স্ত্রী ও সন্তানদের কেউ বেঁচে নেই— সবাইকে ঘরেই মেরে ফেলা হয়েছে।” একইভাবে শেখ রাদওয়ান এলাকার স্কুল ও তাঁবুগুলোতেও গ্রেনেড হামলায় আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি দখল অভিযান বন্ধ না হয়, আমরা সবাই মরে যাব। যারা শুধু দেখছে আর কিছু করছে না, তাদের ক্ষমা করব না।

গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন সপ্তাহে শুধু গাজা সিটিতেই ১০০-এর বেশি রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে শুধু গাজা সিটিতেই প্রায় ১ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বর্তমান পরিস্থিতিকে “প্রলয়ংকরী” আখ্যা দিয়ে বলেন, একটির পর একটি মহল্লা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, মুহূর্তে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেন এক দুঃস্বপ্ন।

এদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা একটি সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছাড়ানোর শর্তে সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। এর আগে উত্তর গাজায় আল-জারিসি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সংগঠনটি এ হামলাকে “ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ” বলে নিন্দা জানায়।

মানবিক সংকটও ক্রমশ গভীর হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবরোধ চলাকালে ক্ষুধাজনিত কারণে এ পর্যন্ত ৩৬৭ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ১৩১ শিশু।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের চলমান দখল অভিযানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। শুধু আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে জোরপূর্বক ৮২ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। শিশুদের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইউনিসেফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ পাঁচ বছরের নিচে অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু ভয়াবহ ক্ষুধার মুখে রয়েছে।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিসি জানিয়েছে, উত্তর গাজায় ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। মানবিক সহায়তাকর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রতিদিন টিকে থাকাই হয়ে উঠছে গাজার মানুষের সবচেয়ে বড় সংগ্রাম। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।

আইপিসির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গাজার বিপুল সংখ্যক মানুষ ন্যূনতম খাদ্যও পাচ্ছেন না। অনেক পরিবার দিন পার করছে অর্ধেক খাবার কিংবা শুধুই পানি খেয়ে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে আগামী মাসগুলোতে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুহার ভয়াবহ আকার নিতে পারে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে বলছে, গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নেবে এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x