ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী আবারো ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। ভূখণ্ডটির বিভিন্ন স্থানে চালানো এই হামলায় একদিনে কমপক্ষে ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে অনেকেই ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষও রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
এদিকে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের পাশে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা।
এঘটনার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৮৩৮ জনে পৌঁছাল।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরে বাস্তুচ্যুতদের এক শিবিরে বিমান হামলায় ৯ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় গাজার বুরেইজ শরণার্থীশিবিরে এক বাণিজ্যিক ভবনে হামলায় নিহত হয়েছেন চারজন।
এছাড়া ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজা ও গাজা শহরে আবারো হামলা জোরদার করেছে। গাজা শহরে এক অ্যামবুশে একটি ট্যাংকে রকেট হামলা ও পরে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো হয়, এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। এতে তিনজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
এরপর ইসরায়েল ব্যাপক পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং টুফাহ ও শুজাইয়া এলাকার অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংস করে। ওয়াফা জানায়, শুধু গাজা শহরেই ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ডজনখানেক আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ সংস্থাগুলো ক্রমাগতভাবে গাজায় আরো ত্রাণ ঢোকানোর আবেদন জানাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জ্বালানির ঘাটতিতে বহু ডেসালিনেশন প্লান্ট, পাম্প স্টেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েল চলতিক বছরের ২ মার্চ থেকে প্রায় সব ধরনের জ্বালানি ঢোকানো বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে পরিষ্কার পানি, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স সবই প্রায় অচল।
মিসর বলছে, ইসরায়েল-ইউরোপ চুক্তি হলেও কিছুই বদলায়নি। গত সপ্তাহে ইসরায়েল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানো নিয়ে একটি চুক্তি হয়। কিন্তু মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি জানিয়েছেন, বাস্তবে ‘কোনো পরিবর্তন হয়নি’। ইইউর পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ‘মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে চুক্তি হলেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না’।
এদিকে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের পরোক্ষ আলোচনা চলছে দ্বিতীয় সপ্তাহে। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলেই জানাচ্ছে সূত্রগুলো। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে আলোচনা চলছে ইসরায়েলি সেনাদের গাজায় মোতায়েনসংক্রান্ত মানচিত্র নিয়ে। পাশাপাশি দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমাতে নতুন পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে।’
হামাস বলেছে, ‘নেতানিয়াহু বারবার আলোচনা ভেঙে দিচ্ছেন। তিনি কোনো সমঝোতা চান না’। অন্যদিকে নেতানিয়াহুর ওপর দেশের অভ্যন্তরে চাপ বাড়ছে, সেনা হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, যুদ্ধ দীর্ঘ হচ্ছে, ক্ষোভ জমছে।