৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ৬ আগস্ট ২০২৫, ৯:৫৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

গাজায় যুদ্ধ থামানোর পক্ষে ইসরায়েলি জেনারেল, নেতানিয়াহুর উল্টো ঘোষণা!

প্রকাশ : ৬ আগস্ট ২০২৫, ৯:৫৯ পিএম

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার যেসব অংশ এখনো ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে নেই, সেসব দখলের প্রস্তাব দিলে সামরিক বাহিনীর প্রধান তীব্র আপত্তি জানান। তিন ঘণ্টাব্যাপী উত্তপ্ত এক বৈঠকে এই বিরোধ দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের তিনজন কর্মকর্তা। মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে সামরিক প্রধান ইয়াল জামির প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে বলেন, গাজার বাকি অংশ দখল করতে গেলে ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে ফেঁসে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপ গাজায় বন্দি থাকা জিম্মিদের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে গাজার ৭৫ শতাংশ ইতোমধ্যেই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে, যখন হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলের জনপদে আক্রমণ চালায়। এই যুদ্ধে গাজার জনবহুল উপকূলীয় অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে—ধ্বংস হয়েছে হাজারো ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ এবং হাসপাতাল। বহু মানুষ বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার বাসিন্দারা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। জাতিসংঘ গাজায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের খবরকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছে, যদি তা সত্যি হয়।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাস বেসামরিক মানুষের মধ্যে অবস্থান নেয় বলে তারা দাবি করে, এবং যেখানে ধারণা করা হয় জিম্মিরা রয়েছে, সেখানে অনেক সময় হামলা এড়িয়ে চলা হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিরাও জানিয়েছেন, তাদের অপহরণকারীরা হুমকি দিত যে, ইসরায়েলি বাহিনী কাছে এলে তাদের হত্যা করা হবে।

নেতানিয়াহু সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণের পক্ষে। কর্মকর্তারা জানান, তিনি ইয়াল জামিরকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেসব জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন, তার বেশিরভাগই কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী গাজায় হামাসের উপর চাপ তৈরি করতে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, সামরিক প্রধানের মতামত জানানোর অধিকার ও দায়িত্ব দুটোই আছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত সব যুদ্ধলক্ষ্য পূরণ হয়, ততক্ষণ সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশনা অনুসারে কাজ চালিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর মঙ্গলবার জামিরের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে, তবে এর বাইরে কোনো মন্তব্য করেনি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে গাজা নিয়ে সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করবেন।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রায় ২০০ জন মানুষ অনাহারে মারা গেছেন, যাদের অর্ধেকই শিশু। বুধবার অন্তত ২০ জন নিহত হন, যখন একটি খাদ্যবাহী ট্রাক উল্টে পড়ে এবং ক্ষুধার্ত মানুষেরা সেটিতে হামলে পড়ে।

গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি লাঘব করতে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে জিম্মিদের মুক্তির দাবিও জোরালো হচ্ছে। গত মাসে কাতারে যুদ্ধবিরতির আলোচনাও ভেঙে যায়। হামাস চায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, আর ইসরায়েল দাবি করে, হামাস প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না এবং তাই তাদের পরাজিত করতেই হবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x