১৮ জুন ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১০:০৪ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

গাজীপুরে শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১০:০৪ পিএম

👁 70 views

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কটুক্তি, শিক্ষক বদলীতে অনিয়ম, বেসরকারি বিদ‍্যালয় নিবন্ধন বানিজ‍্য, বই বিতরণে বৈষম্য সহ নানান অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৭ মে শনিবার সকাল ১০ টায় জেলা শহরের জোড়পুপুর এলাকায় একটি চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট সংবাদ সম্মেলন করেন গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন ঐক্য ফোরাম।

গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েন এর সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন ঐক্য ফোরামের আহবায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র মন্ডল।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়শন এর সভাপতি মোঃ মোছাদ্দিকুর রহমান হাজী মুছা। গাছা প্রাইভেট স্কুল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন, শিক্ষক নেতা শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন বাসন থানা সভাপতি, নাজির আহমেদ, সদর মেট্রো থানা সভাপতি বাদল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, শিক্ষকনেতা মোস্তাফিজুর রহমান, মোখলেছুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত আহমেদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এ সময় গাজীপুরে কর্মরত বিভিন্ন সংবাদ মাধ‍্যমের কর্মরত সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম শিক্ষকদের দোকানদার এবং গার্মেন্টস শ্রমিক বলে কটুক্তি, শিক্ষক নেতৃবৃন্দের নামে মিথ‍্যা মামলা দায়ের, স্কুল নিবন্ধনের মোটা অঙ্কের ঘোষ দাবি সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

আরো জানা যায়, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের করেই তিনি সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে উপজেলার ৯৬২ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের লক্ষাধিক শিশুকে বই না দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে দোকান বলে কটুক্তি করেন। এর প্রতিবাদে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা তার অপসারণ দাবি করে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক গাজীপুর, ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর স্মারক লিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ২১ জানুয়ারি উপ পরিচালক তৌহিদুল ইসলামকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত হলেও অদ‍্যাবদি কোন ব‍্যবস্থা নেয়নি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে খানিক বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত‍্যতা পাওয়া গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থার সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে।

এছাড়াও শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে
অনলাইনে সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে শিক্ষক বদলীতে অনিয়মের ব‍্যপক অভিযোগ পাওয়া পাওয়া গেছে। এ ব‍্যপারে সদর উপজেলার ঝাজর সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের বদলী বঞ্চিত জনৈক সহকারি শিক্ষক অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম উপজেলাধীন লাগালিয়া আমির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয় এবং চতর নসর উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে দুজন শিক্ষককে বদলী নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলী করেছেন । তার বিরুদ্ধে ওই দুই শিক্ষককে অফলাইনে বদলীর অভিযোগ করেছেন বদলী বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষক। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ আলম বলেন, সকল অভিযোগের বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নিয়মের বাইরে কিছু হলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ‍্যাদেশ ও বিধি লঙ্ঘন করে চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেন শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম । এ বিষয়ে ব‍্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন উপজেলার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিভাগীয় উপ পরিচালক আলী রেজা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে অতি দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও উল্লেখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন নীতিমালা ২০২৩ মোতাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিদ‍্যালয় পরিদর্শন পূর্বক পাঠদানের সুপারিশ করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশের আলোকে যাচাই বাছাই করে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি দিবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আর নিবন্ধন দিবেন বিভাগীয় উপ পরিচালক। জানা যায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার চারটি স্কুল পাঠদানের অনুমতির আবেদন করেন। আবেদনের একদিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি অধ‍্যাদেশ, ডিডি, ডিজিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চারটি স্কুলকে নিবন্ধনের অনুমতি প্রদান করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম। এ বিষয়ে আব্দুস সালামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোছাদ্দিকুর রহমান বলেন, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম একজন দূর্ণীতিগ্রস্থ শিক্ষা অফিসার। তার পূর্বের কর্মস্থলেও বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে তিনি শাস্তি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।গাজীপুর সদর উপজেলায় যোগদান করেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেছেন। বই বানিজ‍্য, নিবন্ধন বানিজ‍্য, শিক্ষক বদলী বানিজ‍্য সহ সরকারি বরাদ্দে কমিশন বানিজ‍্যের পায়তারা করছেন। অনতি বিলম্বে তাকে অপসারণ করা না হলে কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানান তিনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x