৩ আগস্ট ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ৫:১১ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

চলে গেলেন ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ৫:১১ পিএম

বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন তার পুত্রবধূ এবং ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা।

সন্‌জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তাঁর পিতা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক, আর মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা সন্‌জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন।

একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে সন্‌জীদা খাতুনের জীবন ছিল অঙ্গীকারমুখর। কলেজের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় তিনি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আবৃত্তি, অভিনয় এবং গান চর্চা করতেন। তিনি বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজেও যুক্ত ছিলেন এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিজের ভূমিকা রেখেছেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর মুকুল ফৌজে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার সাংস্কৃতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে।

তার গানের শিক্ষার শুরু সোহরাব হোসেনের কাছে, এরপর তিনি নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান এবং পল্লিগীতি শিখেছেন হুসনে বানু খানম, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলিমা সেনের কাছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সন্‌জীদা খাতুনের নাম বিশেষভাবে মুছে যাবে ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। সেই দুঃসময়েও, ২২ ফেব্রুয়ারি যখন গৃহবন্দী পরিস্থিতি ছিল, সন্‌জীদা খাতুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে মহিলাদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেদিনই তিনি ভাষণের মাধ্যমে বলেছিলেন, “একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে”—যা ছিল তাঁর প্রতিবাদী ও সাহসিকতার এক অমর দৃষ্টান্ত।

সন্‌জীদা খাতুনের জীবন ছিল বাঙালি সংস্কৃতি ও মননের এক অমূল্য রত্ন। তাঁর অবদান, সংগ্রাম ও শৃঙ্খলিত সংস্কৃতি চর্চা বাঙালি সমাজে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x