১৮ জুন ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ৯:১৭ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

চীনের পুরুষদের কেন বাংলাদেশি নারী বিয়ে করতে নিষেধ?

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ৯:১৭ পিএম

👁 37 views

বিশ্বব্যাপী বিয়ে ও সম্পর্ক সংকট নতুন কিছু নয়, তবে চীনের অবিবাহিত পুরুষদের সমস্যা এখন ভয়াবহ ও অমানবিক রূপ নিচ্ছে। নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চীনে এখন হাজার হাজার পুরুষ বিয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না। সেই শূন্যতা পূরণে তারা বিদেশি নারী বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে বউ সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছে। এই প্রবণতা এখন মানবপাচার ও নারীর অধিকার লঙ্ঘনের ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার (২৭) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের দূতাবাস ২৫ মে এক ঘোষণায় চীনা নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে না করেন। কারণ, এতে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দূতাবাস একে সরাসরি ‘বিদেশি বউ কেনা’র মতো ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। প্রথমে শুনতে বিষয়টি কৌতুক মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে এক মর্মান্তিক গল্প, নারী পাচার, জোরপূর্বক বিয়ে ও নিপীড়নের দীর্ঘ চক্র।

প্রসঙ্গত, চীনের এই সংকটের মূল শুরু ১৯৮০ দশকে। সে সময় ‘এক সন্তান নীতি’ ও ভ্রূণ নির্ধারণ প্রযুক্তির অপব্যবহার শুরু হয়। পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়ায় বিপুল সংখ্যক কন্যা সন্তান গর্ভে নষ্ট করা হয়। ফলে কয়েক দশকের ব্যবধানে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সংখ্যা মারাত্মক বেড়ে যায়। এখন সেই সময়ের ছেলেরা বিয়ের উপযুক্ত হলেও দেশে মেয়ের সংখ্যা কম থাকায় তারা বিয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না।

বিশেষ করে চীনের প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে এই সংকট প্রকট। অবিবাহিত পুরুষরা এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বিশেষত বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে নারীদের বিয়ে করার চেষ্টা করছে। বাস্তবে এসব বিয়ে অনেক সময় নারীদের পাচার এবং জোরপূর্বক বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ করার ঘটনাতে পরিণত হচ্ছে।

লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিং গাও ইন্ডিয়া টুডে-কে জানান, চীনের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ বিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শিশু ও তরুণীদের পাচার করে এনে বিয়ের নামে বিক্রি করা হচ্ছে।

এই পাচারকারীদের মূল টার্গেটে এখন রয়েছে বাংলাদেশ ও নেপালের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলো। উন্নত জীবন ও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের চীনে নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পরই তাদের পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিপত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং চলাফেরায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

চীনে পৌঁছানোর পর এসব তরুণীদের অনেককেই ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয়। মূল্য নির্ধারণ হয় মেয়েটির বয়স, চেহারা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী। এরপর তাদের জোর করে চীনের কোনো অবিবাহিত কৃষক বা শ্রমজীবী পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

এই তথাকথিত ‘বিয়েতে’ তাদের মতামত কিংবা সম্মতি থাকে না। এরপর তাদের সন্তান নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। পালিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তুলে দেওয়া হয়, যেখানে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাদের।

একাধিক গবেষণা বলছে, ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনে প্রায় ৫ কোটি পুরুষ অবিবাহিত থেকে যাবেন। এই বাস্তবতায় চীনের সমাজে বিয়ের বয়স কমিয়ে আনার দাবি উঠেছে। তবে এতে কোনো সমাধান আসছে না। বরং পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৯ সালেই সতর্ক করেছিল মিয়ানমার থেকে চীনে নারীদের পাচার হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপালও এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। চীনের অভ্যন্তরীণ লিঙ্গ বৈষম্য, দারিদ্র্যপীড়িত দেশের সহজলভ্য নারীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে মানবিক এক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। দুঃখজনকভাবে, এখন পর্যন্ত এটি ঠেকাতে আন্তঃদেশীয় কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x