দুই কোটিরও বেশি মানুষের মহানগরী ঢাকা এখন আন্দোলনের মূল কেন্দ্র। ছোট-বড় যেকোনো ইস্যুতে মুহূর্তে উত্তাল হয়ে উঠছে ঢাকার রাজপথ। চলছে অবরোধ, সমাবেশ ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি। প্রায় প্রতিনিয়ত এসব কর্মসূচি ঘিরে ব্যস্ততম নগরীজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অচলাবস্থা। তাতে যানজট যেমন বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনভোগান্তি। অসহনীয় এ অবস্থা থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা যেন জানা নেই কারোরই।
জুলাই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গত বছর ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর গত নয় মাসেরও বেশি সময়ে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক ডজন কর্মসূচি চলেছে ঢাকায়। নানান দাবিদাওয়া নিয়ে এসব কর্মসূচিতে কখনো ছাত্র, কখনো শিক্ষক, কখনোবা রাজনৈতিক দল বা বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমেছে।
গত সপ্তাহেই রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথে সরব হতে দেখা যায় ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি)। সেই কর্মসূচিতে ইসলামভিত্তিক দলগুলোও ব্যাপকভাবে সাড়া দেয়।
শাহবাগ অবরোধের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি একপর্যায়ে পৌঁছে যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা পর্যন্ত। যমুনা ঘেরাওয়ের পর বিক্ষোভকারীরা মিন্টো রোডের পার্শ্ববর্তী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশের সড়কে সমাবেশ করে। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সপ্তাহ না যেতেই দেশের সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে গত বুধবার দুপুর থেকে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। একই দিন ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনে এ কর্মসূচি সমাবেশ ও গণ-অনশনে রূপ নিচ্ছে।
রাস্তা বন্ধ করে এসব কর্মসূচির ফলে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছানো ও অসুস্থ রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়াসহ নানান ক্ষেত্রে ভোগান্তি বাড়ছে। নগরবাসীরা বলছেন, তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চান। তারা আর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে চান না। সরকার যত দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে ততই ঢাকাবাসীর জন্য মঙ্গল বলে মনে করেন তারা।
আন্দোলনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন সড়ক অচল হয়ে পড়ায় অনেক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও সৃষ্টি হচ্ছে। অতিষ্ঠ নগরবাসীকে অনেক সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিতর্কে জড়াতেও দেখা যাচ্ছে। এমনকি ঘটছে হাতাহাতির মতো ঘটনাও।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা আছিয়ার ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন, পলিটেকনিক্যাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন, জুলাই আন্দোলনে আহতদের আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ডিগ্রি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন, প্রধান সড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন, ইশরাক হোসেনকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসানোর দাবিতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন দেখা গেছে। এসব আন্দোলনের ফলে যে ভোগান্তির তৈরি হচ্ছে, তা থেকে পরিত্রাণ চান সাধারণ মানুষ।
এদিকে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন না করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বারবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও কার্যত তার কোনো সুফল মিলছে না। আন্দোলনকারীরা এসবে কর্ণপাতও করছেন না। তারা মনে করেন, অচলাবস্থা যত তৈরি হবে, দাবি আদায়ের পথ তত সুগম হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা সবসময় আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করছি, তারা যেন রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন। সবাইকে একটু সহনশীল এবং সংযত আচরণ করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।