আগামী শিক্ষাবর্ষে ১ জানুয়ারি থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিতে চায় সরকার। এ জন্য পাঠ্যপুস্তক সরবরাহে ক্রয় প্রক্রিয়ায় দরপত্র দাখিলের সময়সীমা ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এ ছাড়া সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ১৮৭ কোটি টাকার পাঠ্যপুস্তক কেনার একটি প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যের সব পাঠ্যবই তুলে দিতে পারেনি সরকার। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় বৈঠক দুটিতে অনলাইনে যোগ দেন।
বৈঠকে অনুমোদিত প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি পাঠায়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ২০২৬ সালের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক দরপত্রের মাধ্যমে মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সময় কমানোর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি ক্রয় বিধিমালা- ২০০৮ প্রয়োগ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, গত সপ্তাহে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি শাখার পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের দর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করা হয়। সভায় মত দেওয়া হয়, পুনঃদরপত্র আহ্বান করে সব কাজ শেষ করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ হতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়।
মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯৮টি লটের মোট ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫১ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব পাঠ্যপুস্তক কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামতের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকা। মেরামতে কাজ পেয়েছে চীনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের মে মাসে অগ্নিকাণ্ডে কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিদ্যুৎ উপৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্র ২০১৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে।
সভায় তিউনিশিয়া থেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি এবং মরক্কো থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ করা হবে। গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৬১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।