২৭ আগস্ট ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১:৫২ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

জিআই স্বীকৃতি পেল ময়মনসিংহের হাতে তৈরি ‘লাল চিনি’

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১:৫২ এএম

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার প্রায় আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী আখের রস থেকে হাতে তৈরি মিহি দানার লাল চিনি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। আজ মঙ্গলবার ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রত্যাশা করছেন, জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আরও অনেক মানুষ এই চিনি উৎপাদনে আগ্রহী হবেন।

ফুলবাড়িয়ার পলাশতলী চালাপাড়ার কৃষক এনামুল হক বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন জিআই মর্যাদা পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গত বছর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি দপ্তর যৌথভাবে লাল চিনিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের সুপারিশ করে। স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ আমলেই ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামে লাল চিনি উৎপাদন শুরু হয়েছিল। ধনী পরিবারগুলো এই মিষ্টান্ন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের উপহার হিসেবে পাঠাতেন।

কৃষক দুলাল মিয়া জানান, বর্তমানে তারা লাল চিনির ভালো দাম পাচ্ছেন। ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই, পলাশতলী, বিদ্যানন্দ, কৈয়ৈরচালা, বাকতা, কুশমাইল, কালাদহ, এনায়েতপুর, রাঙামাটিয়া, সন্তোষপুর ও চৌধারসহ বিভিন্ন গ্রামে এই চিনি উৎপাদিত হয়।

প্রান্তিক কৃষকের জন্য লাল চিনি একটি নগদ অর্থকরী ফসল। এটি বাড়িতে কয়েক ধাপে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। সাধারণত এটি দুটি পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়—ডিঙ্গি (বড় ট্রেতে) এবং ডাং বা দুপ (হাতে)। রাধাকানাই গ্রামের কৃষক আরব আলী বলেন, ‘লাল চিনি জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আখ চাষে আরও যত্নশীল হবো।

একই গ্রামের আরেক কৃষক ওয়াদুদ মিয়া জানান, লাল চিনির জন্য আখ চাষের খরচ তুলনামূলক কম। কারণ এতে অল্প পানি, সার ও কীটনাশক লাগে। কৃষকরা আরও জানান, আখের পাতা ও উচ্ছিষ্ট স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয়, যা তাদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস।

চলতি বছর ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ মেট্রিক টন লাল চিনি উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এই মৌসুমে লাল চিনির দাম বাড়ায় কৃষকরা ভালো মুনাফা পেয়েছেন।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাসরিন আক্তার বানু বলেন, ইতোমধ্যে কিছু কৃষককে প্রদর্শনী প্লটের আওতায় আনা হয়েছে এবং তাদের উন্নতমানের আখের জাত ও উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশে একমাত্র ফুলবাড়িয়াতেই লাল চিনি উৎপাদিত হয় এবং এটি শিল্পে পরিণত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া হলে লাল চিনি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x