দেশে জুন মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। গত পাঁচ মাসের চেয়ে এ মাসের ২৭ দিনে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে ২৭ দিনে ভাইরাসজনিত এ রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৭২০ জন। গত পাঁচ মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৫ জনের। শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকার, আরেকজন রাজশাহীর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ার রোগীও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় আড়ালে বাড়ছে করোনাভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে এই তিন রোগের প্রকোপ একসঙ্গে বেড়ে গেলে তা সামলানো কঠিন হবে। তাই সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে বিশেষ প্রস্তুতি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৭ জন বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৫ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ছয়জন, দুই সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ছয়জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ১১ জন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) দু’জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে সাতজন, মে মাসে তিনজন এবং জুন মাসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, পাঁচ দিন পর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে এই দু’জনের তথ্য স্বাস্থ্য শুক্রবার অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসার চেয়ে সচেতনতা জরুরি। আতঙ্কিত না হয়ে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে হবে।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার এবং জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। এ মশার ডিম দুই বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। আমাদের বাসস্থানের আশপাশে থাকা যে কোনো পানির পাত্র, ফুলের টব, ব্যবহারহীন ড্রাম, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা কিংবা প্লাস্টিক প্যাকেট– এসবই এডিস মশার প্রজননের আদর্শ জায়গা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এসব জায়গায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজীর আহমেদ সমকালকে বলেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও ভয়াবহ হতে পারে। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়ার রোগীও বাড়ছে। এই দুটি ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়াই। এ জন্য এখনই এডিস মশা নিধন কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়াতে হবে। ঢাকার প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত শনাক্তকরণ কিট ও আইভি ফ্লুয়েড সরবরাহ করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবেও মজুত বাড়াতে হবে, যাতে কোথাও প্রয়োজন হলে দ্রুত সরবরাহ করা যায়।