অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলেও সিলেটে সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে লবিং-তদবির ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে প্রচারণার অংশ হিসেবে অনেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কে কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এ নিয়ে সিলেটজুড়ে বেশ আলোচনা চলছে। তবে নতুন করে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে সিলেটের সন্তান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের একটি পোস্টার।
গতানুগতিক পোস্টারের বাইরে ডা. জোবাইদার রঙিন একটি পোস্টারে তাকে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পোস্টারের সৌজন্যে কোনো ব্যক্তির ও সংগঠনের পরিচয় নেই। যার কারণে কারা এই পোস্টারটি নগরীতে সাঁটাচ্ছেন তাদের পরিচয়ও মিলছে না।
তবে ডা. জোবাইদার পোস্টার সাঁটানোর কারণে বুধবার (১৪ মে) এক ব্যক্তিকে আটক করেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ওই ব্যক্তির কোনো দলীয় পরিচয় মিলেনি। বিএনপির একটি সূত্র বলছে, দলের ভেতর থেকে কেউ এটা করতে পারেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, একটি বেনামি পোস্টারে প্রার্থিতার ওপর কোনো প্রভাব পড়তে পারে না।
দেশে সরকার গঠনে সিলেট-১ আসন বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ‘সিলেট-১ যার সরকার তার’ এ ধরনের একটি মিথ রয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। যার কারণেই এই আসনটি অত্যন্ত মর্যাদার। এটিকেই ঘিরে থাকে সব আলোচনা। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সিলেটের বিএনপি নেতাদের মধ্যে নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু করে। বিশেষ করে সিলেট-১ আসন (সিটি করপোরেশন-সদর উপজেলা) নিয়েই বেশিরভাগ আলোচনা চলছিল।
এ অবস্থার মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে গেলে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। সফরকালে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখাও করেন। অনেকেরই ধারণা, সিলেট-১ আসনের প্রার্থিতা নিয়ে তিনি আলোচনা করতে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে সিলেটের মানুষের ধারণা একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না।
যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে আরিফের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর আরিফের অনুসারীরা দাবি করেন, সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন আরিফ। এ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে তারেক ও আরিফুলের বৈঠকের ছবিসহ ‘শুভ কিছু হচ্ছে’ লিখে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। বৈঠকের পর খোদ আরিফুল হক চৌধুরীও লন্ডনের একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নতুন কিছু আসছে।
এদিকে আরিফুল হক চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকাবস্থায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে সিলেটের সন্তান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের একটি পোস্টার ছড়িয়ে পড়ে। রঙিন পোস্টারের এক পাশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি। আরেক পাশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি। পোস্টারটির অর্ধেক অংশজুড়ে বড় করে ছবি রয়েছে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের।
পোস্টারটিতে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশের অহংকার, সিলেটবাসীর গর্ব- ডা. জুবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১-এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই। তবে কে বা কারা তাকে এই আসনে দেখতে চান তা পোস্টারে উল্লেখ নেই।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) যুক্তরাজ্য সফর শেষে সিলেটে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শুক্রবার (১৬ মে) এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাড়া দেননি। তবে দেশে ফিরে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন তারেক রহমান সিলেটের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। লন্ডন সফরে দলের প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে দল সুসংগঠিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কিছু প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত না হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি, অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে বোর্ড গঠন করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এসময় তিনি সিলেট-১ আসনে তারেক রহমান বা তার পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, এতে করে সিলেটবাসীর ১৭ বছরের বঞ্চনার অবসান হবে।
ডা. জোবাইদার বেনামি পোস্টার সাঁটানোর বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘ডা. জোবাইদা একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তাছাড়া তিনি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিনী এবং জিয়া পরিবারের সদস্য। এই স্বনামধন্য ব্যক্তির নামে সংগঠনের পরিচয়হীন সিলেট-১ আসনে প্রার্থী চাই দাবি করে তার ছবি দিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে শহরে। আমি মনে করি এই পোস্টার যে বা যারা সাঁটিয়েছেন তাতে তাকে অসম্মান করা হয়েছে।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তিনি যদি নির্বাচন করতে চান তাহলে পোস্টার লাগবে নাকি। ব্যক্তি স্বার্থে কোনো মহল এই কাজ করেছে। ভবিষ্যতে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যকে নিয়ে তাদের সম্মান ক্ষুণ্নের কাজ না করার আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, এটা কোনো বিষয় হলো? এরকম একটা পোস্টার নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।