জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে বাণিজ্য চুক্তি করেছে সেটিকে একটি ‘বড় চুক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর কথার সুর ধরে বলা হয়, ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্য নিয়ে তিনি যে আগ্রাসী কৌশল নিয়েছিলেন, সেটি এখন ফল দিতে শুরু করেছে।
জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরুর সময় থেকেই একটি সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী বক্তব্য দিচ্ছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। কিন্তু একাধিক প্রতিনিধি দলের সফরের পরও এই চুক্তি রহস্যজনকভাবে অধরা ছিল। চুক্তির বিস্তারিত দিকগুলো নিয়ে এখনো দুই পক্ষ খোলাসা করে কিছু জানায়নি। সরলীকরণ করে এটিকে ট্রাম্পের কৌশলের জয় বলা যেতে পারে। এমনও হতে পারে, জাপানের দেখাদেখি অন্য দেশগুলোও হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির পথে হাঁটবে।
এখন পর্যন্ত বলা যায়, জাপান সবচেয়ে ভালো চুক্তিটি পেয়েছে। অথবা বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব দেশের বড় ধরনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর চুক্তিটি জাপানের। দেশটির পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক কার্যকর হবে। এটি যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনো বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নেই।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি কার্যকর হওয়া নিয়ে আজ বুধবার বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিবিসির ইকোনমিকস এডিটর ফয়সাল ইসলাম। তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চলাকালে জাপানি প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। মূলত, এটিই ওয়াশিংটনের কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ, মার্কিনিরা জাপানের অতিরিক্ত ভদ্র আচরণের সঙ্গে পরিচিত, ক্ষুব্ধ আচরণের সঙ্গে নয়।
আলোচনার সময় টোকিও কঠোর অবস্থানে ছিল। কারণ জাপানের হাতে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড হোল্ডিংস আছে। দেশটির অর্থমন্ত্রীও বলেছিলেন, দরকার হলে এই কার্ডটি (মার্কিন ট্রেজারি বন্ড) আলোচনার টেবিলে তোলা যেতে পারে।
বাণিজ্য চুক্তিটি এমন এক দিনে হলো, যেদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা জাপানের টোকিওতে অবস্থান করছেন। এর আগে আলাপ উঠেছিল যে, জাপান, ইইউ ও কানাডা মিলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু নতুন বাণিজ্য চুক্তি সে সম্ভাবনা থামিয়ে দিল।
যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের চুক্তির বিস্তারিত নিয়ে এখনো তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে এটা পরিষ্কার যে জাপান তার কৃষিজ পণ্যের আমদানিকে সুরক্ষা দিয়েছে। যদিও তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি চাল আমদানি করতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া, জাপানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনোভাবে আধা ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হতে পারে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো। তা হলো, জাপান চাইলেই আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারতো। আগামী ১ আগস্ট থেকে কয়েকটি দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কার্যকর হবে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে এর কেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, সেটি দেখার জন্য হলেও জাপান আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারতো। জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে আছেন। অপেক্ষায় না থাকার জন্য এটি একটি কারণ হতে পারে।
বৃহৎ প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে যা দাঁড়ায় তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান মিত্রদের ওপর যে শুল্ক আরোপ করছে, তা এক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু আরোপের পর খারাপ কিছুর আশঙ্কায়, অনেক দেশ তা মেনে নিচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, জাপানের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।