৪ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
প্রকাশ : ১ অক্টোবর ২০২৫, ৪:২৩ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় নেই ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ

প্রকাশ : ১ অক্টোবর ২০২৫, ৪:২৩ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে যে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, তাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো প্রসঙ্গ নেই। এতে বেশ কিছু বিষয় অস্পষ্ট। গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এ পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। নেতানিয়াহু কয়েকটি দফা সংস্কার করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এ প্রস্তাব প্রকাশের পর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলছে, ঘোষণার আগে তাদের প্রস্তাবটি দেখানো হয়নি। এটি পুরোপুরি ইসরায়েল-প্রভাবিত।

এ অবস্থায় দুই পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে অনমনীয় থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলছেন, তারা গাজার অধিকাংশ এলাকায় সেনা মোতায়েন রাখবেন। হামাস বলছে, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থরক্ষা হয়নি; পরিকল্পনায় তাদের নির্মূল করার ষড়যন্ত্র রয়েছে। অবশ্য ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা আগের বারের চেয়ে ভিন্ন। আগে তিনি গাজার সব বাসিন্দাকে সরিয়ে বিনোদন এলাকা বানানোর চিন্তা করেছিলেন।

ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, এটা সম্ভবত মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সুসময়, যা মধ্যপ্রাচ্যে ‘চিরকালীন শান্তি’ নিয়ে আসবে। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি লিখেছে, যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পর কী হবে, সেটা নিয়ে ট্রাম্প এ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহে স্পষ্ট হবে– বাস্তবে তাঁর এ পরিকল্পনা কতটা কার্যকর। কারণ, কয়েকটি ইস্যুর ওপর এ সাফল্য নির্ভর করবে।

প্রস্তাবটি মেনে নিতে হামাসকে চাপ দিয়ে ট্রাম্প বিবেচনার জন্য তিন থেকে চার দিন সময় দিয়েছেন। নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হামাসের হাতে তিন-চার দিন সময় আছে। যদি তারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তবে ইসরায়েল যা করবে, তার পক্ষে পূর্ণ সহায়তা দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে হামাস বলেছে, এটা পুরোপুরি ইসরায়েল প্রভাবিত। এ প্রসঙ্গে হামাস কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাওয়ি বলেন, হামাসের সঙ্গে পরিকল্পনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করা হয়েছে, তা হামাসকে দেখানোও হয়নি। পরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা শান্তি পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছেন।

হামাসের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, হামাস মনে করে, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় তাদের নির্মূল করার জন্য ‘অসম্ভব শর্ত’ আরোপ করা হয়েছে। এটি পর্যালোচনায় তাদের কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। সংগঠনটি বলছে, তারা রাজনৈতিক ও সামরিক শাখার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনার বিষয়ে মত দেবেন।

হামাসের আরেকটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, প্রস্তাবটি ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের সব সেনাকে গাজা থেকে সরিয়ে না নেওয়ার কোনো পরিকল্পনাকে তারা সমর্থন করেন না। অপরদিকে ট্রাম্পের পাশে থেকে নেতানিয়াহু প্রস্তাবটি মেনে নিলেও তাঁর সরকারের উগ্র ডানপন্থি অনেক নেতা এই ২০ দফার কয়েকটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা হামাসকে ‘নিঃসঙ্গ’ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, তারা সব জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করবেন এবং গাজা উপত্যকায় থাকবেন। পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানিও।

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন লিখেছে, ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশের পর ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু হামাসকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তারা যেন এটা মেনে নেয়; তা না নহলে তাদের ফল ভোগ করতে হবে। এর আগে সোমবার দুই নেতা হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।

কার্যত ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা কোনো অগ্রগতি নিয়ে আসতে পারবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধা থেকে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। দুই পক্ষ একে অপরকে পরিকল্পনায় বঞ্চনার জন্য হয়তো দোষারোপ করবে। এতদিন এমনটাই হয়ে আসছে। আলোচনা চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসনকে সরাসরি ইসরায়েলের পাশে থাকতে দেখা যায়। হামাসের প্রতিনিধিদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে হামলার ঘটনাও দেখা গেছে। ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার কোথায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, তাদের স্বাধীনতা– এসব উল্লেখ নেই।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x