বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে এখন থেকে মার্কিন ডলারের মূল্য নির্ধারণ হবে বাজারের চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, আমরা এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে ডলার বাজারকে পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান গভর্নর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গভর্নর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. হাবিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
গভর্নর বলেন, বাজারভিত্তিক করা হয়েছে ডলারের বিনিময় হার। এতে বাজারে ডলারের সংকট থাকবে না। যদি কোনো বড় ধরনের আন্তর্জাতিক পেমেন্টের প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহযোগিতা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহের ফলে ডলারের দরে বাড়তি প্রভাব পড়বে না। নতুন নিয়মে ডলারের দরে সর্বোচ্চ সীমা ১২২ টাকা থাকছে না। বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারিত হবে। তা ১২২-এর বেশি বা কম হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আশ্বস্ত করে বলেন, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) উচ্চ প্রবাহ থাকায় বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ডলারের দর উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে না। এই পদক্ষেপের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে এবং দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
আহসান এইচ মনসুর জানান, সংস্কারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী জুন মাসে আইএমএফের দুটি কিস্তিসহ দেশের অর্থনৈতিক সহায়তা তহবিল হিসেবে পাওয়া যাবে।
আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, আগামী জুনের মধ্যে আরও সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আসবে। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা, এআইআইবিসহ কয়েকটি সংস্থা থেকে আরও ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে আগামী মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ আসবে। গভর্নর বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো ব্যাংকের গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করা। ইতিমধ্যে ১৪টি বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে গুণগত পরিবর্তন এসেছে।
এ সময় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের ডলারের বাজার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। এ সময় আমাদের বাজারভিত্তিক যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। এখন সবাইকে সবার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সুযোগ পেয়ে যদি ডলারের বাজার নিয়ে কেউ খেলা করে, সেটা ঠিক হবে না। আশা করছি, ডলারের বাজার স্থিতিশীলই থাকবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে নিজের কাজ সঠিকভাবে পালন করব বলেই আশা করছি।