হঠাৎ করে স্লুইস গেটের পানি ছেড়ে দেওয়ায় তলিয়ে গেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ২০০ বিঘা আমন ধানের ক্ষেত। কিভাবে এই ক্ষতি পোষাবেন তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষকদের সাথে আলোচনা না করে স্লুইস গেটের পানি ছাড়ায় এই পরিস্থিতি। তবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, পাটচাষি ও মৎস সম্পদের কথা চিন্তা করে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত; দিশেহারা কৃষক। ছবি: সারাবেলার খবর
পাবনার সুজানগর উপজেলার বাদাই গ্রামের কৃষক বকুল শেখ। এবার ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান বপন করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ১ জুলাই একরাতের ব্যবধানে পানিতে তলিয়ে গেছে তার সাত বিঘা আমন ধানের ক্ষেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
বকুল শেখ বলেন, ‘আমি কৃষি কাজ করি। এরপরই নির্ভরশীল। আমার তো উপায় নাই। এখন আমার কি হবে। আপনারা যদি ক্ষতিপূরণ দেন তাহলে বেঁচে থাকার মতো কিছু করতে পারি।’

তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত; দিশেহারা কৃষক। ছবি: সারাবেলার খবর
শুধু বকুল শেখই নয়, তার মতো আরো শতাধিক কৃষকের কপালে একই চিন্তার ভাঁজ। হঠাৎ করেই তালিমনগর স্লুইস গেটের পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের প্রায় ২০০ বিঘা বোনা আমন ধানের ক্ষেত। এখন কিভাবে এই ক্ষতি পোষাবেন তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষক রিজাই শেখ ও নাদের শেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে তালিমনগর স্লুইস গেট নিয়ন্ত্রণ করেন ইউএনও। কিন্তু তিনি আমাদের সাথে কোনো আলোচনা পরামর্শ না করে পানি ছেড়ে দিয়েছেন। একরাতের মধ্যে ধানের চারা সব ডুবে গেছে। এর আগে কখনো এমন হয়নি।’

তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত; দিশেহারা কৃষক। ছবি: সারাবেলার খবর
কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘বিলের ৫০০ বিঘা জমির মধ্যে ২০০ বিঘা আমন ধান ক্ষেত এখন পানির নিচে। যদি ধীরে ধীরে অল্প করে পানি ছাড়া হতো তাহলে ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না আমাদের।’
সুজন বিশ্বাস ও আকতার হোসেন নামে অপর দুই কৃষক বলেন, ‘এই আমন ধানটা আমাদের খরচ খুবই কম হয়। এই ধানে বছরের খাবারের একটা ব্যবস্থা করি আমরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন আশা সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন এর ক্ষতিপূরণ চাই।’

তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত; দিশেহারা কৃষক। ছবি:সারাবেলার খবর
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ এর দাবি, ‘পাটচাষিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ও বিলে মৎস্য সম্পদের কথা চিন্তা করে জুলাই এর শুরুতে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ পাট কাটার উপযুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পানির সংকট রয়েছে। এছাড়া জোয়ারের পানির সাথে রেনু পোনা বিলে আসে। এসব মিলিয়ে পানি ছাড়া হয়। তবে যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, আমাদের জানালে কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত; দিশেহারা কৃষক। ছবি: সারাবেলার খবর
সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পানি ছাড়ার বিষয়ে কৃষকরা আমাদের জানিয়েছিল যে পানি যেন একেবারে না ছেড়ে আস্তে আস্তে ছাড়ে। বিষয়টি আমরা ইউএনও স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু উঁচু এলাকার পাটচাষিদের চাপ ও দাবির প্রেক্ষিতে পানি ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। এখানে আসলে সবার কথাই মাথায় রাখতে হয়। তবে পাম্প হাউজের মাধ্যমে পানি টেনে নিলে বেশির ভাগ জমির ধান রক্ষা পাবে।’
কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘সুজানগর উপজেলায় এবছর দুই হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৭৭ মেট্রিকটন চাল।