রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমস্যা হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকস (দায়রা) আয়োজিত বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্সের উদ্বোধনকালে এই মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, সংকটের আট বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা তত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কেননা এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে শিশু-তরুণের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। এই পরবর্তী প্রজন্ম ইতোমধ্যেই বড় হতে শুরু করেছে। তারা আদৌ আর আশ্রয়-ক্যাম্পের জীবনে থাকতে চাইবে না। তারা বিদ্যমান ব্যবস্থাকে মেনে নেবে কিনা- সেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা এতোটাই প্রকট হতে যাচ্ছে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো আঞ্চলিক এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যখন আমাদের ভূমিতে রোহিঙ্গা প্রবেশ শুরু হলো, তখন আমি নিজেও দায়িত্বপ্রাপ্ত একটা জায়গাতে ছিলাম। সবাই ভেবেছিল, এটা সাময়িক সমস্যা। একমাত্র আমি বলেছিলাম, ‘যত দিন যাবে, এই সংকট দীর্ঘায়িত হবে।’ কেননা তাতমাদোর লক্ষ্যই হলো- মিয়ানমারকে সম্পূর্ণভাবে রোহিঙ্গাশূন্য করে ফেলা। সেজন্য প্রত্যর্পণের সুযোগ কোথায়? রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে কাজ চলছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তৌহিদ হোসেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সব সংকটের পরেও আমি বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হতে চাই। কেননা বর্তমান তরুণ নেতৃত্ব ২০২৪ সালের জুলাইতে যেভাবে ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, তাতে ইতিবাচক হওয়াই যায়। যদিও ১৯৯০ সালেও গণতন্ত্রের ভালো সুযোগ এসেছিল, যে সুযোগ আমরা ক্ষমতা পেতে না পেতেই হারিয়েছি। তবে তরুণেরা ভুল করতে করতে শেখে। সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আমি দেখি, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশে আমরা ভিশনারি রাজনীতি দেখতে পাবো। সেজন্যই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ‘ভালো কর্মী’ হিসেবে গড়ার উদ্যোগ অপরিহার্য। যেখানে যথাযথ জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি নানান দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন শুল্ক আরোপের ঘটনা ভৌগলিক রাজনীতিতে নতুন ধারণা আনলেও তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আরও দুয়েক বছর সময় দরকার বলেও মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব-রাজনীতির চিত্রপট খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো আরও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন খুবই কাঠামোগত পদ্ধতিতে হচ্ছে, তেমনি ইরানে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল আক্রমণের মতো হুটহাট যুদ্ধাবস্থারও সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের পেছনে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার।