৩ আগস্ট ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ৯ জুন ২০২৫, ১০:৪৭ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ধরলা পাড়ে শান্তির খোঁজে

প্রকাশ : ৯ জুন ২০২৫, ১০:৪৭ এএম

নদীর স্রোত কখনো শুধু পানি নয়—তা বহন করে আবেগ, স্মৃতি, সুখ আর খানিকটা স্বস্তি। ষোল নদ-নদীর কুড়িগ্রাম জেলার মানুষদের কাছে নদী মানেই জীবনের সঙ্গে গভীর এক আত্মিক বন্ধন। যাদের জীবনে বিনোদনের সুযোগ সীমিত, তাদের কাছে নদীর পাড়ই যেন এক টুকরো মুক্তির নিঃশ্বাস।

কুড়িগ্রাম শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধরলা সেতু ও নদীর পাড় এ জেলার মানুষের কাছে পরিণত হয়েছে সবচেয়ে প্রিয় প্রাকৃতিক বিনোদনকেন্দ্রে। ঈদুল আজহার ছুটিকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে এখানকার পরিবেশ যেন হয়ে উঠেছে এক আনন্দঘন উৎসবের মাঠ।

ঈদের দ্বিতীয় দিন রবিবার (০৮ জুন) দেখা যায়, ধরলা সেতুর দুই প্রান্ত, নদীর তীর এবং বাঁধজুড়ে নানাবয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে এসেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে—মা-বাবা, সন্তান, দাদা-দাদি। কেউ কেউ প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হাঁটছেন সেতুর ওপর দিয়ে। কেউ বসে আছেন নদীর পাড়ে, চেয়ে আছেন অনন্ত জলরেখায়।

শিশুদের আনন্দ যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে বড়দের মনও। কেউ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে, কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, কেউ আবার নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছে নদীর স্নিগ্ধতা আর সেই মুহূর্তের আনন্দ।

উলিপুর উপজেলা থেকে আসা তরুণ নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা সময় পেলেই এখানে চলে আসি। ধরলা যেন আমাদের নিজস্ব আনন্দের জায়গা। নদীর ধারে বসে জীবনের সব চাপ একপাশে সরিয়ে দিয়ে নিরিবিলি সময় কাটানো যায়।

কুড়িগ্রাম শহর থেকে ঘুরতে আসা রশিদ রহমান ও তার স্ত্রী লিলি বেগম বলেন, আমরা দুজনই চাকরি করি। ছুটির দিনে একটু স্বস্তির সময় কাটানোর জায়গা খুব দরকার। ধরলা সেতু আমাদের সেই স্থান। শুধু প্রকৃতি নয়, এখানে যেন আমরা নিজেদেরও খুঁজে পাই।

দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা বলছে, ধরলা নদী ও সেতুকে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে থাকতে পারে শিশুদের জন্য খেলার জায়গা, পরিবারিক পিকনিক স্পট, নৌভ্রমণের ব্যবস্থা, স্ন্যাকস কর্নার এবং একটি ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার।

রাজারহাট থেকে আসা স্কুল শিক্ষার্থী আরিয়ান ও কাকলির চোখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। তারা বলে, সারা সপ্তাহ পড়াশোনার চাপে বন্দি থাকি। আজ বাবার সঙ্গে ধরলা পাড়ে এসে মনে হচ্ছে—আমরা যেন কোনো নতুন জগতে এসেছি। নদী, মানুষ আর আকাশ সবই আজ অন্যরকম।

ধরলা কেবল একটি নদীর নাম নয়। এটি কুড়িগ্রামের মানুষের অনুভব, আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভালোবাসা। বিনোদনের অভাবে জর্জরিত একটি জেলার মানুষের কাছে ধরলা নদীর পাড় আজ হয়ে উঠেছে এক টুকরো আশ্রয়। যেখানে মানুষ হাসে, হাঁটে, ভালোবাসে—আর নদীর স্রোতের মতোই বয়ে চলে জীবনের শান্ত ধারা।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x