১ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ৯:১৭ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

নিজের ছেলের কিডনি দিয়ে দুই রোগীর জীবন বাঁচালেন চিকিৎসক মা

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ৯:১৭ পিএম

পাকিস্তানের করাচির একজন নারী চিকিৎসক (নেফ্রোলজিস্ট) তার ২৩ বছর বয়সি একমাত্র ছেলের উভয় কিডনি দান করেছেন, যার ফলে রক্ষা পেয়েছে কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা দুই রোগীর জীবন। জানা যায়, মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনার পর ওই চিকিৎসকের ছেলেকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়েছিল। দ্য নিউজের বরাতে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভি এ খবর দিয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, দুর্ঘটনার শিকার সৈয়দ সুলতান জাফর (২৩) জিয়াউদ্দিন মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজের একজন ডেন্টাল শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি সিন্ধু ইনস্টিটিউট অব ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন (এসআইইউটি)-এর কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহার আফরোজের একমাত্র ছেলে। সুলতান জাফর পাকিস্তানের অত্যন্ত সম্মানিত দুই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ – অধ্যাপক টিপু সুলতান এবং অধ্যাপক ডা. শেরশাহ সৈয়দের নাতি।

অধ্যাপক টিপুর মতে, মৃতের বাবা সৈয়দ ফুরকান জাফর কয়েক বছর আগে লিভার ক্যান্সারে মারা যান এবং তাকে কোহি গোথে সমাহিত করা হয়েছে, যেখানে পরিবারটি একটি দাতব্য হাসপাতাল পরিচালনা করে। সুলতান জাফরকে তার বাবার পাশে সমাহিত করা হবে। পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে অধ্যাপক টিপু সুলতান বলেন, গত বুধবার সকালে করাচির একটি বেসরকারি হাউজিং সোসাইটিতে বন্ধুদের সাথে গাড়ি চালানোর সময় সুলতান জাফর এক মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন।

তিনি আরও বলেন, মাথায় একাধিক আঘাতের কারণে জাফরকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পৌঁছানোর পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ইনটিউবেশন করা হয় এবং প্রাথমিক অস্ত্রোপচারের পর মস্তিষ্ক থেকে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণের জন্য আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। অধ্যাপক টিপুর মতে, ‘সুলতানকে পরে আবারও অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় আরেকটি ক্র্যানিওটমির জন্য। আমরা সেই দিনগুলো ক্রমাগত ভয় এবং যন্ত্রণার মধ্যে কাটিয়েছি।’

সুলতান জাফরের প্রাথমিকভাবে উন্নতির লক্ষণ দেখা যায় এবং তাকে নার্সিং কেয়ারের জন্য একটি ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই তার অবস্থার অবনতি ঘটে। অধ্যাপক টিপু বলেন, ‘জাফরের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তাকে আবার আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। পুনরায় ইনটিউবেশন করা হলেও তার চোখের পাতাগুলো স্থির হয়ে যায়।’

অধ্যাপক টিপু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা যা পার করেছি তা বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ নেই। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আইসিইউর বাইরে দীর্ঘ আলোচনার পর, মাহার আফরোজ (জাফরের মা) তার জীবনের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন – ছেলের অঙ্গ দান করার – যাতে অন্যরা বাঁচতে পারে।

জানা গেছে, ডা. আফরোজ ব্যক্তিগতভাবে তার ছেলের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে এসআইইউটি-তে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। অধ্যাপক টিপু বলেন, তিনি (মাহার আফরোজ) একজন নেফ্রোলজিস্ট যিনি অঙ্গদাতার অভাবে প্রতিদিন রোগীদের মৃত্যু দেখতে পান। জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসআইইউটি-তে জাফরের উভয় কিডনিই বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা দুই রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে তার অন্যান্য অঙ্গ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x