৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ৬:১৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

নির্বাচনে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে : সিইসি

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ৬:১৯ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী কোর প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সিইসি বলেন, নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আগে ছিল না। নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে-রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা বা অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত। আগেও আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ কমবেশি ছিল। তবে এখন হয়তো এর মাত্রাটা একটু বেশি।

এআইয়ের চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, কিন্তু অন্যান্য চ্যালেঞ্জের তুলনায় এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)-এর ব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের চ্যালেঞ্জ আগে ছিল না। কেমন চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে, যেটা আমরা এখনো জানি না। আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সুতরাং আমরা সেন্ট্রাল ডেটা সেল করব মিস ইনফরমেশন এন্ড ডিসইনফরমেশন মোকাবিলা করার জন্য। আর এটাকে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যেতে হবে। ম্যাসেজটা গ্রামে-গঞ্জে, চর এলাকা, পাহাড়ী এলাকায়সহ সব জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। যারা ট্রেনিং নিবেন তারা এই দায়িত্ব পালন করবেন। মিস ইনফরমেশন এন্ড ডিসইনফরমেশন যাতে প্রপারলি অ্যাড্রেস হয় সেই ম্যাসেজ আপনারা পৌঁছে দেবেন।

তিনি বলেন, যেকোনো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতার বিষয়ে আপনারা জোর দেবেন। তিনি ভোট গ্রহণে সম্পৃক্ত নির্বাচন কর্মকর্তাদের আইন, বিধি জানার পাশাপাশি নৈতিকতা, সততার সাথে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশনা দেন। সিইসি বলেন, ট্রেনিংকে সিরিয়াসলি নিতে হবে। প্রশিক্ষণের ওপর আমাদের সফলতা নির্ভর করছে। প্রশিক্ষণের বটম লাইন হচ্ছে- পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।

কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সাবেক এক সিইসিকে অপদস্ত করা হয়েছে এবং আরেকজন সাবেক সিইসিও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, যা দুঃখজনক। এই পরিস্থিতির জন্য দায় নির্ধারণের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে হবে। তবে বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মূল করণীয় হলো-নিজের দায়িত্বকে আইন ও সংবিধান অনুযায়ী যথাযথভাবে পালন করা। কারো কার্যকলাপ বা ভাবনার দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দায়িত্ব আইনানুগভাবে পালন করাই প্রকৃত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। নির্বাচন কর্মকর্তাদের সততা, নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য। এবার ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হবে এবং ইসির প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা, যার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ভালো নির্বাচনই আমাদের কমিটমেন্ট, কারণ এর মাধ্যমে মানুষের ত্যাগ, রক্ত ও দীর্ঘ বছরের দুঃখ-কষ্ট সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ এবং দায়িত্ব পালন এমনভাবে করতে হবে যাতে কমিটমেন্ট বজায় থাকে, সুন্দর ও সঠিক নির্বাচন নিশ্চিত হয় এবং কোনো ফাঁকিবাজি বা ধোঁকাবাজি করা যাবে না। কমিশন ও মাঠপর্যায়ের সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রায় ৫০ হাজার প্রিজাইডিং অফিসার সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচন সফল হবে এবং তাদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছানো প্রয়োজন-নির্বাচনে কোনো ধানাইপানাই হবে না। ভালো নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের শক্তিশালী ও দক্ষ করে তুলতে পারলেই একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি ও আইন-কানুন বিষয়ে ভালো প্রশিক্ষণ দেওয়ার জোর দাবি জানান। তিনি জানান, আদালতের আদেশে চাকরি ফিরে পেয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেওয়া ৬০ জন কর্মকর্তা শুধু পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের কাজে সম্পৃক্ত রাখা হচ্ছে।

তিনি ইসির কৃচ্ছতা সাধনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা পুননির্ধারণের মাধ্যমে কমিশন ইতোমধ্যে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। আগে পুরুষদের জন্য একটি বুথে ভোটার সংখ্যা ছিল ৫শ’ এবং নারীদের জন্য ৪শ’। এখন তা যথাক্রমে ৬শ’ ও ৫শ’ করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৪৯ হাজার বুথ কমানো সম্ভব হয়েছে। শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এত বড় অঙ্কের ব্যয় সাশ্রয় করা গেছে। ভবিষ্যতেও প্রতিটি ধাপে এই মিতব্যয়িতা নিশ্চিত করতে হবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x