বগুড়ায় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দাদিশাশুড়ি ও নাতবউকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা এবং কিশোরীকে ছুরিকাঘাতে আহত করার ঘটনায় অবশেষে প্রধান অভিযুক্ত সৈকত হাসানকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোররাতে শহরের খান্দার এলাকায় পাসপোর্ট অফিসের পাশে এক গোপন অভিযানে তাকে আটক করা হয়। গ্রেফতারৃত সৈকত হাসান বগুড়া শহরের ইসলামপুর হরিগাড়ী এলাকার মো. সোহেল ইসলামের ছেলে।
ডিবি বগুড়ার ইনচার্জ ইকবাল বাহার জানান, ‘‘সৈকতকে গ্রেফতারের জন্য আমরা টানা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে আসছিলাম। সে বিভিন্ন কৌশলে আত্মগোপনে ছিল। তবে চৌকস তদন্ত এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে অবশেষে আটক করা সম্ভব হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সৈকতকে সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে।’’
ঘটনাপ্রবাহ:
গত ১৬ জুলাই (বুধবার) রাত সোয়া ৮টার দিকে বগুড়া পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর হরিগাড়ী এলাকায় এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতরা হলেন—স্থানীয় মৃত আব্দুল কুদ্দুস বুলুর স্ত্রী লাইলী বেওয়া (৮৩) এবং পারভেজ ইসলামের স্ত্রী হাবিবা ইয়াসমিন (২১)। সম্পর্কে তাঁরা দাদিশাশুড়ি ও নাতবউ। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন পরিবারের আরেক সদস্য, এসএসসি পাস করা কিশোরী বন্যা (১৬)।
প্রেম থেকে প্রতিশোধ:
নিহতদের স্বজনরা জানান, সৈকত দীর্ঘদিন ধরে বন্যাকে উত্যক্ত করত এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। পরিবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানালে সৈকত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বুধবার রাতে সৈকত তার আরও ৭-৮ জন সহযোগী নিয়ে ওই বাড়িতে হানা দেয়। তারা প্রথমে হাবিবাকে, পরে লাইলী বেওয়াকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় বন্যা বাধা দিতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক হাবিবা ও লাইলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্ত ও অভিযান:
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করে। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর জানান, ‘‘প্রধান অভিযুক্ত সৈকতকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি সহযোগীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আহত বন্যা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’
সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
এ ঘটনার পর এলাকায় শোক ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী এ ধরনের অপরাধের দ্রুত বিচার দাবি করেছে। সামাজিক সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং প্রেম প্রত্যাখ্যানজনিত প্রতিশোধমূলক অপরাধ প্রতিরোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, নারীর ‘না’ বলার স্বাধীনতাকে যারা মানতে চায় না, তারা সমাজে চরম সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে। প্রেমের নামে এমন বিভৎস প্রতিশোধপ্রবণতা শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা প্রশংসনীয় হলেও, সামগ্রিকভাবে সমাজের মূল্যবোধ এবং বিচারপ্রক্রিয়ার দৃঢ়তা বৃদ্ধির সময় এখনই।