৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সোমবার
প্রকাশ : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

নেপালে কেন নামল তরুণরা রাস্তায়, নেপো কিডস ও হতাশা!

প্রকাশ : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ পিএম

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য অনুযায়ী, নেপালে কেবল ফেসবুক ব্যবহার করে ১ কোটি ৬৫ লাখ মানুষ। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৯৬ লাখ। জনসংখ্যা ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় এটি বেশ কম। তবে চাকরিসহ নানা অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা দেশটির অনেক বাসিন্দা আয়ের মাধ্যম হিসেবে এসব প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু এসব প্ল্যাটফর্মের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা ছাত্র-জনতার মাঝে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স ও লিংকডিনে প্রবেশাধিকার বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে নেপালের সরকার বলছে, এসব প্ল্যাটফর্ম সরকারের নিবন্ধন নেয়নি। তারা নিবন্ধনের জন্য একটি সময়সীমাও দিয়েছিল, কিন্তু প্ল্যাটফর্মগুলোর কর্তৃপক্ষ তা মানেনি। এ কারণে তারা বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেপাল সরকার নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন পাস করে ২০২৩ সালে। কিন্তু দেশটির এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল- অনেক পরিষেবাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল।

নেপালে প্রতি বছর বহু বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। তাদের অনেকের থাকার ব্যবস্থা আছে রাজধানী কাঠমান্ডুর থামেল এলাকায়। এই পর্যটকদের ঘিরে নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে থামেলে। এলাকাটির বিপণিবিতানগুলোতে একজন বিশেষ কর্মী থাকেন। যার কাজ ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করা। তাদের অনেকে স্কুল ও কলেজে পড়েন। এর বাইরে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে বিপণিবিতানে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ করেন।

দেশটির অনেক ট্যুর অপারেটর গ্রুপ গড়ে উঠেছে ফেসবুককে ঘিরে। এমনই একটি নেপাল ট্রাভেল (দ্য হিমালায়াস)। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি। সহিংসতা শুরুর পর এই গ্রুপে বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যটক পরামর্শ চেয়ে পোস্ট করেছেন। তাদের ফ্লাইট টিকিট ও হোটেল বুক করা আছে। তবে পোস্টগুলোর কমেন্টে অনেকেই দেশটিতে ভ্রমণ না করার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

ফেসবুক ছাড়াও ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেক নেপালি বিনোদন, খবর ও ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা করেন। এমনই একজন ২৫ বছর বয়সী জেনিশা জোশি। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে গয়না ও আনুষাঙ্গিক সামগ্রী বিক্রি করেন। এএফপিকে জোশি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে তিনি হতাশ। ফেসবুক বন্ধ হলে তাঁর ব্যবসায় ধস নামবে। এ ছাড়া, তাঁর আত্মীয়রা দেশের বাইরে থাকেন। তাদের সঙ্গে তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সরকারের এটি বন্ধ করা উচিত হয়নি।

বিনোদন ও ব্যবসার মতো ক্ষেত্রগুলো বন্ধ হওয়াটাকেই তরুণদের ক্ষোভ তৈরির পেছনের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল রোববার একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে কাঠমান্ডু পোস্ট। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, তরুণরা এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে তাদের জমে থাকা হতাশা প্রকাশ করে। বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং বিশ্বের খবরাখবর রাখে। দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে তারা আগেই অস্থির ছিল। এর মাত্রা এতটাই যে, তাদের অনেকেই দেশে আর কোনো ভবিষ্যৎ দেখছে না।

জেন-জি’দের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এসব প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা তাদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তাদের ক্ষোভ উগরে দিতে বাধ্য করেছে। তাদের বেশি ক্ষোভ ‘নেপো কিডস’-দের নিয়ে। যারা খ্যাতনামা রাজনীতিবিদদের সন্তান। তাদের জীবনযাত্রা ও সামাজিক অবস্থান যতটা না নিজেদের অর্জন, এর চেয়ে বেশি তাদের মা-বাবার প্রভাবের কারণে।

সোমবার আন্দোলন শুরুর ব্যাপারে জেন-জি’রা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। তারা রাজধানীতে জড়ো হয়ে সমস্ত রাগ, ক্ষোভ প্রকাশ করতে চেয়েছে। এ নিয়ে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, সরকার যদি তরুণদের হালকাভাবে নেয়, তবে সেটা হবে গুরুতর ভুল। এমন হঠাৎ গড়ে ওঠা তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন অতীতে বহু প্রভাবশালী শাসনকেও পতনের মুখে ফেলেছে।

বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে লেখা হয়, সবশেষ উদাহরণ প্রতিবেশী- বাংলাদেশ। এই তরুণদের আন্দোলন নিজস্ব এক গতিতে চলে। ফলে এটির ফলাফল অনুমান করা অসম্ভব। বিশ্বজুড়েই এসব তরুণদের ক্ষোভের জ্বালানি হয়েছে ‘পুরনো প্রতিষ্ঠানের’ উদাসীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের প্রাতিষ্ঠানিক চেষ্টা। সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করায় নেপালি তরুণদের ক্ষোভও তাই যৌক্তিক।

সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে নেপালের আইনগত ও সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন হয়েছে একেবারেই ভুলভাবে। প্রথমত, এসব প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল একটি সর্বজনীন আইনের মাধ্যমে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে নয়। সুপ্রিম কোর্টও সরকারের কাছে ঠিক সেটিই চেয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সেই রায়কে বিকৃত করেছে।

সন্দেহ করা হচ্ছে, নিবন্ধনের কথা বলে সরকার এসব প্ল্যাটফর্মে কিছু শর্ত চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। যেমন- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘সমস্যাজনক কনটেন্ট’ সরিয়ে ফেলা। এই বিধান সহজেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত। প্ল্যাটফর্মগুলো এ বিষয়টি বিবেচনা করেই নেপালে নিবন্ধিত হওয়ার আগ্রহ পায়নি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x