২ আগস্ট ২০২৫ শনিবার
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ৭:২৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ধস, পরিদর্শনে সরকারের দুই উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ৭:২৯ পিএম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে পদ্মা নদীতে। এতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার তিনটি গ্রামে নদীভাঙনের হুমকিতে পড়েছেন অন্তত ৬০০ পরিবার। আতঙ্কে বসতঘর ও দোকানঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার (১১ জুন) দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সরকারের অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির।

পরিদর্শন শেষে দুই উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরাও চাই এখানে একটি স্থায়ী বেরিবাঁধ হোক। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করছে। মানুষের ভিটেমাটি চলে যাওয়া খুবই দুঃখজনক বিষয়। স্থায়ী সমাধানে দ্রুত হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি ও ওয়াটার মডেলিং করে একটি কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেন, নদীশাসন একটি জটিল বিষয়। গত ১০ বছরের পদ্মার পানি ও স্রোতের গতিপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু বালু ফেলে সমস্যার সমাধান হবে না। নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও অবৈধ ড্রেজিং-ই ভাঙনের মূল কারণ। এজন্য শুধু শ্রমিক নয়, ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করতে হবে এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামিয়ে হলেও নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ জনস্বার্থবিরোধীভাবে ড্রেজিংয়ের অনুমোদন দিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এই ইস্যুকে নিয়মিত ফলোআপে রাখব এবং জনমত গড়ে তুলতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ভাটির দিকে পূর্ব প্রান্তে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে সেটির সঙ্গে নদীশাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথম ধস নামে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায়। চলতি বছরের ৮ জুন সকালে আবারো বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ধসে পড়ে পদ্মায়। এতে জাজিরা উপজেলার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের লোকজন চরম আতঙ্কে পড়েন। এরই মধ্যে অন্তত ১৫টি পরিবার তাঁদের ১৩টি বসতঘর ও দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছেন।

আলম খার কান্দি এলাকার মুদিদোকানি মাসুদ তালুকদার বলেন,ভাঙন শুরু হওয়ায় আমার দোকান সরিয়ে নিতে হয়েছে। এখন আমার বাড়িটিও নদীর একেবারে ধারে। প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি, না জানি কখন সবকিছু হারিয়ে ফেলি।

রবিন বেপারীর বাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এলাকায়। ২০২০ সালে নদীভাঙনে তাঁর বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়। পরে আশ্রয় নেন জাজিরার আলম খার কান্দিতে। এখন সেই এলাকাও হুমকিতে। তিনি বলেন, পদ্মা আমাদের একবার নিঃস্ব করেছে, এবার দ্বিতীয়বার। এখানকার বাঁধ দেখে একটু নিরাপদ মনে হয়েছিল, এখন সেটাও ভেঙে যাচ্ছে। জানি না এবার কোথায় যাব।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, বাঁধে ধসের ঘটনায় কিছু বাসিন্দা নিরাপদ স্থানে তাঁদের ঘর সরিয়ে নিয়েছেন। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন তাঁদের সহায়তা দেবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন,বাঁধের কিছু অংশে সংস্কার কাজ চলছিল। নদীতে পানি ও স্রোতের গতি বেড়ে যাওয়ায় উজানের দিকে কিছু অংশ ধসে পড়েছে। ভাঙন রোধে ওই স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x