গাইড বই বাণিজ্যে অর্থ আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ফাজিল মাদরাসার কতিপয় চক্রান্তকারী শিক্ষকের ষড়যন্ত্র আর দাখিলের গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কম থাকা ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগের নাটক সাজানোর ঘটনায় এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের হাতে শারীরিক নির্যাতনসহ লাঞ্ছিতের শিকার সেই অধ্যক্ষ মো. আব্দুস ছোবহান মারা গেছেন।
শনিবার (২১ জুন) ভোর ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায়। বাদ মাগরিব উপজেলার গোবিন্দাসী ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে গোবিন্দাসী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
আব্দুস ছোবহান ভূঞাপুর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
এদিকে, তার মৃত্যুতে উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গুঞ্জন উঠেছে তাকে মানসিকভাবে আঘাত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার এমন মৃত্যুতে ফেসবুকে সহকারী কমিশনারের সমালোচনা করে বিভিন্ন পোস্ট করা হয়।
পরিবারের লোকজন জানায়, অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহান গত ২৫ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে চলতি মাসের ৯ জুন হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবার।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল ভূঞাপুর ফাজিল মাদরাসায় দাখিল গণিত পরীক্ষার দিন কেন্দ্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রশ্নপত্র কম থাকার অভিযোগে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহানকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং তাকে হুমকি দেন যে বয়স বিবেচনা না করেই ‘পিঠের চামড়া তুলে’ দেবেন বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়াও তার অফিসে ডেকে নিয়েও নানাভাবে অপমান অপদস্ত করেন।
এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ২০ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন অধ্যক্ষের ছেলে আব্দুল ওয়ারেছ। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার তারিকুল ইসলামও চক্রান্তকারী শিক্ষক, কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
শুধু তাই নয়, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে মব সৃষ্টি করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। এতে ওই অধ্যক্ষকে নিজ কক্ষে অবরোধ করে রাখা হয়। এতে ভিডিও করায় সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হয়।
এর আগে, ১৬ মার্চ জমিয়াতুল মাদারিসিল সংগঠন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংগঠনের সভাপতি আফছার উদ্দিনকে কেন্দ্রসচিব হিসেবে মনোনয়নের জন্য মাদরাসা বোর্ডে সুপারিশ করে। তবে ২৪ মার্চ অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহান এই মনোনয়নের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন এবং ৮ এপ্রিল পুনরায় কেন্দ্রসচিবের দায়িত্বে বহাল হন।
জমিয়াতুল মাদারিসিল উপজেলা শাখার এই সংগঠনের বিরুদ্ধে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার গাইড বই বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পরবর্তী লোকদেখানো একটি তদন্ত কমিটি করে উপজেলা প্রশাসন।