২৪ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১:০৪ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

পুতিনকে চিঠিতে কী লিখলেন খামেনি

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১:০৪ এএম

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ যখন চূড়ান্ত, ঠিক তখনই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) চিঠিটি মস্কোতে পুতিনের হাতে তুলে দিতে সোমবার সেখানে পৌঁছেছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ইরান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর হামলা চালিয়েছে, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রয়টার্সকে দেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে ইরান হতাশ। যদিও প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসরায়েলি হামলাগুলোর নিন্দা করেছেন, তবুও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। ইরান মনে করছে, এমন সংকটপূর্ণ মুহূর্তে রাশিয়ার উচিত আরও সরাসরি ও কার্যকরভাবে পাশে দাঁড়ানো।

চিঠিতে কী ছিল?
চিঠির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ না করা হলেও, বিশ্লেষকদের মতে এতে প্রধানত ৪টি বার্তা উঠে এসেছে: রাশিয়ার সক্রিয় ও প্রকাশ্য সমর্থন কামনা: যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও সম্ভাব্যভাবে প্রতিরোধমূলক অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ।

বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষায় রাশিয়ার ভূমিকা: ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিকভাবে বৈধতা দিতে রাশিয়ার জোরালো অবস্থানের দাবি।

মধ্যপ্রাচ্যে রুশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব: পুতিনকে মার্কিন-ইরান উত্তেজনা নিরসনে আরও সক্রিয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইরান-রাশিয়া সমন্বয়ের জোরদারকরণ: তেহরান চায়, রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের অবস্থান আরও শক্তিশালীভাবে তুলে ধরুক।

মস্কোতে পৌঁছে আরাগচি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস (TASS)-কে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান ও রাশিয়া নিজেদের অবস্থান সমন্বয় করছে। আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানায়, প্রেসিডেন্ট পুতিন আরাগচিকে গ্রহণ করবেন, তবে আলোচনার নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

পুতিন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ইসরায়েল মস্কোকে আশ্বস্ত করেছে যে, ইরানে বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রুশ প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে তিনি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, রাশিয়া ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার সমর্থন করে। তবে তিনি এখনো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে মন্তব্য করেননি।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে ও পরমাণু চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে মস্কোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ চাপে থাকা রাশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

এদিকে আয়াতুল্লাহ খামেনির চিঠি কেবল একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং এটি ইরান-রাশিয়া সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি এবং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক পথনির্দেশও। এখন দেখার বিষয়, পুতিন কতটা ইতিবাচকভাবে এই বার্তার জবাব দেন এবং তা ভবিষ্যতের মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x