ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য বিশ্বনেতা ও রাজপরিবারের সদস্য রোমে সমবেত হয়েছিলেন। পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় প্রবেশের সময় ভ্যাটিকানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান, যেখানে পোপের মরদেহ সশস্ত্র অবস্থায় শায়িত ছিল। তিনি প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কফিনের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর তিনি বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে দুই ঘন্টাব্যাপী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন। ভিআইপি অতিথিদের তৃতীয় সারিতে তাঁকে বসতে দেখা গেছে। তাঁর পাশে ছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।
উপস্থিত ভিআইপি অতিথিদের বসার ব্যবস্থাও ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কফিনের কাছে সামনের সারির একটি আসনে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। তাঁদের ঠিক পাশের সারিতে বসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও তাঁর স্ত্রী ব্রিজিট মাখোঁ।
সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স উইলিয়াম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
তবে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের বসার স্থান। তাঁরা বসেছিলেন ইউক্রেনের দুই বড় সমর্থক দেশের প্রধানদের মাঝে। মেলানিয়ার বাম পাশে ছিলেন এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট আলার কারিস আর ট্রাম্পের ডান পাশে ছিলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাব। এস্তোনিয়া ও ফিনল্যান্ড উভয়ই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ মিত্র। জেলেনস্কিকেও ভ্যাটিকানে বেশ ভারাক্রান্ত মুখে দেখা গেছে। তিনি আর এমানুয়েল মাখোঁ একই সারিতে বসেছিলেন, যদিও তাঁদের মাঝে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি সংবেদনশীল সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ফলে বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে আজ সবকিছু ভুলে যেন এক ছাদের নিচে জড়ো হয়েছেন বিশ্বনেতারা।
শেষকৃত্যের আগে এবং অনুষ্ঠানের পরে প্রধান উপদেষ্টা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট, লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউক এবং গ্র্যান্ড ডাচেস, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট, হন্ডুরাসের প্রধানমন্ত্রী, আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট, পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট, বেলজিয়ামের রাজা এবং রানী, বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী, মোনাকোর প্রিন্স অ্যালবার্ট, নরওয়ের প্রিন্স এবং রাজকুমারী, তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী, লিচটেনস্টাইনের প্রিন্স এবং রাজকুমারী, ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক, আইওসি-র প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।