২৬ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

প্রাণ ফিরছে সাদাপাথরে, বাড়ছে পর্যটকের ভিড়

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে প্রাণ ফিরছে, বাড়ছে পর্যটকদের পদচারণা। স্বস্তি ফিরে এসেছে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে। তবে, এখন আর সাদাপাথরের বুকে শাবল, খুন্তি চালানোর কোনো দৃশ্য নেই। পুরোদমে ক্ষত স্থানে পাথর প্রতিস্থাপন চলছে। এ ছাড়া বিছনাকান্দি, জাফলং, উৎমাছড়া, রাংপানিতেও লুট হওয়া পাথর প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। পর্যটকরা জানান, সাদাপাথর আগেরমতো আর ভালো লাগে না। যদিও পাথর প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে তবে আগের রূপ ফিরে পাওয়া সময়ের ব্যাপার।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের আলটিমেটামের পর ২৫ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পাথর ফিরিয়ে দেওয়ার আলটিমেটাম শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট)। এর মধ্যে পাথর ফেরত না দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবে প্রশাসন। যাদের কাছে সাদাপাথর মজুত পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।

অন্যদিকে শনিবার (২৩ আগস্ট) সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া পাথর ফেরত দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫ লাখ পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। সাদাপাথরে প্রতিস্থাপনের জন্য সিলেট সদর উপজেলা থেকে ২৫১টি ও কোম্পানীগঞ্জ থেকে ১০৯টি ট্রাকে করে পাথর পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া শারফিন টিলায় ৩০/৪০ হাজার ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিন মিয়া কালবেলাকে বলেন, তিনদিন আগে জারি করা জেলা প্রশাসনের এ নির্দেশনার পর এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজর ঘনফুট পাথর পর্যটন স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে বাকি পাথরগুলো পর্যায়ক্রমে প্রতিস্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিস্থাপনের কাজের পাশাপাশি পাথর লুটের ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সাদাপাথর প্রতিস্থাপনে এতদিন ছোট নৌকা দিয়ে বহন ও শ্রমিকদের ব্যবহার করা হলেও এখন থেকে পেলোডার মেশিন ও ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডির নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও প্রতিস্থাপন দ্রুত করার জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইউএনও বলেন, কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পাথর লোড-আনলোডে পেলোডার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন জব্দ করা পাথর ভোলাগঞ্জ পর্যটনঘাটে ট্রাকযোগে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই পাথর যাতে দ্রুত প্রতিস্থাপন করা যায় সেজন্য কাজ চলছে।

সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনুর রুবাইয়াৎ বলেন, সাদাপাথর উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ধোপাগুল ও লালবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে প্রতিস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। রোববার দুপুর থেকে উদ্ধার হওয়া সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫০টি ট্রাকে পাথর প্রতিস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ধোপাগুল এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে ৮টি ট্রাক পাথর পাঠিয়েছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন অধিকারী বলেন, জাফলংয়ে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আরও ৭ হাজার ঘনফুট মজুত রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোও প্রতিস্থাপন করা হবে। চুরি ও লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করতে আমাদের যৌথবাহিনীর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, আলটিমেটামের পর অনেকেই স্বেচ্ছায় পাথর ফিরিয়ে দিয়েছেন। আশাকরি ভালো ফল পাওয়া যাবে। এরপরও যদি কেউ পাথর ফেরত না দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, সোমবার পর্যন্ত সাদাপাথরে প্রতিস্থাপনের জন্য আড়াইলাখ পাথর পাঠানো হয়েছে। প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে পাথরগুলো প্রতিস্থাপন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। উল্লেখ্য, গত ১০ ও ১১ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে দলবেঁধে পাথর লুটের পর দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। কালবেলাসহ অন্যান্য গণমাধ্যম ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর কঠোর অবস্থান নিয়ে পাথর উদ্ধার অভিযানে নামে প্রশাসন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x