১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ৭:১০ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ফুটল বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, আজ পহেলা আষাঢ়

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ৭:১০ পিএম

👁 22 views

বৃষ্টি হোক আর না হোক আজ পহেলা আষাঢ়। বর্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে কদম ফুল। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে ফোটে কদম, যা বর্ষার দূত হিসেবে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানে কদম ফুলের বন্দনা বারবার ফিরে আসে। কদম ছাড়াও বর্ষায় প্রকৃতির বর্ণমালা হয়ে ওঠে আরো বেশ কয়েকটি ফুলের রঙিন খেলায়—বেলি, টগর, বকুল, নাগকেশর, রঙ্গন, গন্ধরাজ, কাঞ্চন। কেয়া ফুলের মিষ্টি সৌরভ বর্ষার আভিজাত্য বৃদ্ধি করে। ফলের বাজারে ডেউয়া, লুকলুকি, জাম, কাঁঠাল ও আমের সমাহার থাকে বর্ষার উৎসবমুখরতা।

আষাঢ়ের আগমন মানেই বাংলার বুকে নতুন এক রূপের উন্মেষ। ঝরো ঝরো মুখর বৃষ্টির সুরে মিশে যায় প্রকৃতির সুরেলা গান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে’। যদিও এই বৃষ্টি এ বছর একটু আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল, তবে আষাঢ় মাসের প্রথম বৃষ্টি বাংলার বর্ষার পবিত্র সূচনা বটে। আষাঢ় ও শ্রাবণের দোলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বর্ষাকাল ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে প্রাণের ছোঁয়া।

বর্ষাকাল প্রকৃতিকে দেয় এক নতুন জীবনের স্পন্দন। কালো গর্জনমুখর মেঘ, মাঝেমধ্যে বিদ্যুচ্চমকের ঝলকানি, অঝোরধারায় বৃষ্টির ঝরঝর, ময়ূরের পেখমের ছোঁয়া—এসবই বর্ষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। গ্রামে নৌকাবাইচের উত্তেজনা, মনসাপূজার আয়োজন, বেড়া ভাসান—এসব সংস্কৃতির অমলিন অংশ। ‘গুরু গুরু মেঘ, গুমরি গুমরি’—বর্ষার গান যেন বাংলার প্রতিটি কোণে প্রতিধ্বনিত হয়।

মেঘের গঠনও অন্যরকম বর্ষায়। গ্রীষ্মকালে পরিষ্কার আকাশ হঠাৎ করেই কালো মেঘে ছেয়ে যায়, কালবৈশাখী ঝড়ের হুঙ্কার দেয়। বর্ষায় আকাশ ঢেকে থাকে গাঢ় ধূসর মেঘে, এমনকি অনেক সময় আকাশও দেখতে পাওয়া যায় না। বৃষ্টি যখন যাত্রাবাড়ীর আকাশে ঝরে, ঠিক তখনই অন্যত্র ঝকঝকে রোদ ফুটে উঠে; তবে এই রোদে শরীর যেন জ্বালা পায় কারণ বাতাসে থাকে অধিক আর্দ্রতা।

বর্ষার দিনে পোশাকের রঙ-রূপেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। মেঘলা দিনে অনেকেই হালকা রঙের পোশাক পছন্দ করেন, আবার যখন আকাশ গাঢ় মেঘে ঢাকা, তখন উজ্জ্বল রঙের পোশাক যেমন নীল রঙ তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বর্ষার এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে মিলেমিশে থাকে মানুষের সাজ-আসরের রঙিন ছবি।

তবে বর্ষাকালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাস্তবতার কঠিন চিত্রও। বর্ষার সময়ে যানজট ও জলজট প্রতিদিনের ভাগ্য। বৃষ্টির নরম বাতাস মনকে প্রশান্তি দিলেও শহরের ফুটপাতের বস্তিঘরের পলিথিন উড়ে যায়। ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ির সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে ঘরবাড়িতে, অন্যদিকে কারো জীবন সংগ্রামে ভরে ওঠে চাহিদা আর হাহাকার।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইলিশ মাছ, যা বর্ষার সঙ্গে বাঙালির অন্তরঙ্গ বন্ধন। যদিও ইলিশের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত বাঙালি এখন আর সেই স্বাদ উপভোগ করতে পারে না তেমন সহজে। তবে ১১ জুন থেকে আবার ইলিশ ধরার অনুমতি পাওয়ায় আশা জাগে বাজারে এই মাছের সচ্ছল উপস্থিতির।

অবশেষে বলা যায়, বর্ষা প্রকৃতির একটি দান, যা বিনাশের পর আবার নতুন সৃষ্টি করে। এই ঋতুর সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য বাংলা মানুষের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও আবেগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বর্ষা আমাদের শেখায়, বিপদে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধন করে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। বাংলার বর্ষাকাল, একে শুধু ঋতু হিসেবে নয়, বরং জীবন ও প্রকৃতির এক অপরূপ কবিতা হিসেবে উপলব্ধি করা হয়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x