ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ধরে নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচনের আগে দুই ধাপে যৌথ মহড়া চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমন সম্ভাবনার ভিত্তিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে অন্তত দুটি মহড়া আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি মহড়া সেপ্টেম্বর মাসে এবং অন্যটি নির্বাচনের ঠিক আগে হবে। এ ধরনের মহড়ার মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধ ও যৌথভাবে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার কৌশল রপ্ত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত একজন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা হবে—এটা ধরেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো কেন্দ্রে সহিংসতা শুরু হয়, তখন যৌথভাবে কীভাবে তা দমন করা যায়, তা মহড়ার মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে। এদিকে বৈঠকে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ঠিকই, তবে ডাকাতির সংখ্যা বেড়েছে এবং এটি এখনও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না। অনেক ঘটনা গণমাধ্যমে না এলেও তাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” তিনি ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী পুরোনো বাসগুলো অপসারণ নিয়েও আলোচনা হয়। প্রথমে জুলাই মাসেই এ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তাব এলেও, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে তা পিছিয়ে ৬ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। কারণ, এ সময় শ্রমিকদের প্রতিরোধ ও আন্দোলনের সম্ভাবনা থাকায় পুলিশের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে।
বৈঠকে মালয়েশিয়ায় উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের সবাই যে বাংলাদেশি—তা নিশ্চিত নয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে পুলিশি অস্ত্র লুটের ঘটনায় এখনও দেড় হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এ নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং র্যাবের পক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণার প্রস্তাব আসে। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, সরকার এ বিষয়ে পুরস্কার ঘোষণা করবে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন প্রয়োজন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ব্যাগে ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে বলেন, এটা হয়তো জাস্ট একটা ভুল। আসিফ মাহমুদ গতকাল রবিবার ভোরে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম-এ অংশ নিতে মরক্কোর মারাকেশে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর ব্যাগে স্ক্যানিংয়ের সময় একটি ম্যাগাজিন ধরা পড়ে।