৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৬ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন যিনি

প্রকাশ : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৬ এএম

তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির নাম ফেসবুক। আর সেই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতার নাম হলো মার্ক জাকারবার্গ। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছেন ‘জাকারবার্গ’। তবে এই জাকারবার্গ সেই জাকারবার্গ নন।

দৈবক্রমে এক মার্কিন আইনজীবীর নাম মার্ক এস জাকারবার্গ। তবে তার সঙ্গে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতার কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও, বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির অন্যতম ওই জাকারবার্গের সঙ্গে নামের মিলের কারণে বেচারা বেশ ভুগেছেন। তার দাবি, ‘ফেসবুক বারবার তার অ্যাকাউন্ট অকার্যকর’ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মটির অভিযোগ, তিনি একজন জনপ্রিয় তারকার নামে ‘ভুয়া অ্যাকাউন্ট’ খুলেছেন।

মার্কিন অঙ্গরাজ্যে ইন্ডিয়ানা ভিত্তিক ওই আইনজীবী বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত আট বছরে পাঁচবার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক। যার ফলে তিনি হাজারো ডলারের ব্যবসা হারিয়েছেন। তিনি ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানান, ওই আট বছরে ফেসবুককে অন্তত ১১ হাজার ডলারের বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তিনি। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি বারবার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে।

আইনজীবী জাকারবার্গ স্থানীয় টিভি চ্যানেল ডব্লিউটিএইচআরকে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘শুনতে সেরকম মনে হলেও এটা কোনো মজার ঘটনা নয়। বিশেষত, যখন তারা আমার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম। আপনি টাকা খরচ করে মহাসড়কের পাশে একটা বিলবোর্ড কিনলেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর মালিকপক্ষ এসে সেই বিলবোর্ড একটি বিশাল আকারের কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলো। অর্থাৎ, টাকা খরচ করেও আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী উপকার পেলেন না।’ এসব ঘটনার পর মেটা জাকারবার্গের অ্যাকাউন্ট আবার সক্রিয় করেছে এবং জানিয়েছে, এ ধরনের ‘ভুল’ যাতে আর না হয়, সেটা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এ বিষয়টি নিয়ে মি. (মার্ক এস) জাকারবার্গ যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, তার জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, জাকারবার্গ ৩৮ বছর ধরে আইন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি এই পেশায় আসার‍ বেশ কয়েক বছর পর ফেসবুক ও তার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সর্বশেষ মে মাসে তার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল এবং মামলা দায়েরের পর তা আবার চালু করা হয়।

জাকারবার্গ তার ভোগান্তির কথা গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরেন। জানান, নিজের পরিচয়ের বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ দিয়েও সুবিধা করতে পারেননি তিনি ফোটো আইডি, ক্রেডিট কার্ড, জন্ম সনদ, এমন কি, অসংখ্য সেলফি দিয়েও মেটার কাছে নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তাকে ‘ফেইক জাকারবার্গ’ নামেই চিনেছে প্ল্যাটফর্মটি!

তিনি বলেন, ‘আমি মার্ক স্টিভেন (জাকারবার্গ)। তিনি মার্ক এলিয়ট (জাকারবার্গ)’। কিন্তু তাতেও মন গলেনি সামাজিক মাধ্যমটির। এসব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলো নিয়ে স্টিভেন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। আই অ্যাম মার্ক জাকারবার্গ নামের ওই ওয়েবসাইটে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গের সঙ্গে নিজের নামের মিল থাকায় কি কি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, তার বয়ান দিয়েছেন।

একবার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন ফেসবুকের জাকারবার্গ মনে করে ভুলক্রমে তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে বসে। ‘নেক্সটডোর’ অ্যাপ থেকে ‘ভুয়া নাম’ ব্যবহারের অভিযোগে নিষিদ্ধ হন তিনি। পাশাপাশি, প্রতিদিন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মনে করে গড়ে তাকে ১০০ মানুষ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়—এ তথ্যও জানাতে ভুল করেননি ‘স্টিভ’ জাকারবার্গ।

দুর্ভাগা জাকারবার্গ জানান, প্রতিদিন একাধিকবার তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। এ জন্য দিনে ৩/৪ বার করে পাসওয়ার্ড বদলান তিনি। অনেক সময় রাতে ফোন অফ করে রাখতে হয় তাকে। মৃত্যুর হুমকি, কারিগরি সহযোগিতার আহ্বান থেকে শুরু করে আরও অনেক ধরনের উদ্ভট মেসেজ থেকে বাঁচার জন্য তাকে এই উদ্যোগ নিতে হয়।

তবে এত কিছুর পরও মিতার প্রতি কোনো রাগ নেই আইনজীবী জাকারবার্গের। তিনি বলেন, যদি (মার্ক এলিয়ট) জাকারবার্গ কখনো ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এসে আর্থিক কষ্টে পড়ে, তাহলে আমাদের নামের মিলের কারণে আমি খুশি মনে বিনা পারিশ্রমিকে তার পক্ষে যেকোনো আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x