২২ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৪ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বহু স্রোতের মোহনা একটিই, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা: আলী রীয়াজ

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৪ পিএম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজ রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মতকে নদীর স্রোতের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, এ সকল স্রোতের একটিই গন্তব্য এবং সেটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক একটি বাংলাদেশ তৈরি করা। আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত ‌‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষরের বর্ণাঢ্য আয়োজনে উপস্থিত হয়ে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের অনেক স্রোত কিন্তু মোহনা একটি- সেটি হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। আমাদের বহু স্রোত, তবু আমরা সকলে এক জায়গায় যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকবো।

তিনি আরো বলেন, আজকের এই দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব এবং অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য এটি হচ্ছে আমাদের দীর্ঘ পথ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। তিনি বলেন, এই জাতীয় সনদ কেবলমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়। এ হচ্ছে নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। এই সামাজিক চুক্তি এই যে প্রত্যাশা এর প্রত্যেকটি বিষয়ের মধ্যে জড়িত আছে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের, তাদের কষ্টের, তাদের প্রচেষ্টার প্রত্যেকটি বিন্দু যুক্ত আছে।

গত বছরের জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা তার প্রতিফলন। বাংলাদেশে গত ১৬ বছর ধরে যে ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে যে সাহসিকতা, যে দৃঢ়তা বাংলাদেশের নাগরিকরা দেখিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যার সূচনা, যা এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়নে বাধ্য করতে পেরেছে সেই অর্জনের একটি স্মারক হচ্ছে এই জাতীয় সনদ।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমাদের যে চেষ্টা, সকলের যে চেষ্টা, সে চেষ্টা থেকে একদিনে সাফল্য অর্জন করবে। একটি দলিল কেবলমাত্র সেটা নিশ্চয়তা দেবে না। আমরা আশা করি এই যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিকনির্দেশক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের দ্বারা আজ বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে স্বাক্ষরিত হয়েছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হয়।

শুরুতেই কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। আজকের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

আজকের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিশেষ অতিথিবৃন্দ। শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এরপর সনদ স্বাক্ষর শেষে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর গত ষোল বছরের দুঃশাসন, দুর্নীতি, গুম, খুন, শাপলা চত্বরের ও পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও জুলাই আগস্ট গণ অভ্যুত্থান, জুলাই সনদের ওপর সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এর নাম ‘ভবিষ্যতের পথরেখা’। ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের পর জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে প্রধান উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে মঞ্চের সামনে একটি ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x