২৪ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ৪:০৪ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

‘বাংলাদেশের কালচার নেগেটিভ ও ছ্যাচড়া মানুষকেই রাজনীতিতে রিওয়ার্ড করে’

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ৪:০৪ পিএম
লেখক-গবেষক ফাহাম আব্দুস সালাম

সর্বসম্প্রতি এনসিসি বা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল দেশের রাজনীতি বিশ্লেষক ও চিন্তকদের মাঝে আলোচনা ও সমালোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনসিসি হলো ২০২৫ সালে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহণের প্রায় ২ মাস পর ৬ অক্টোবর ২০২৪ অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন এবছরের ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল সৃষ্টির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে এই প্রস্তাবনার বিষয়ে সর্বদলীয় সংলাপ শুরু হয়।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবনা অনুযায়ী এনসিসির সদস্য হবেন ৯ জন। তারা হলেন—রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, সংসদের উভয় কক্ষের বাকি সকল সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাদের মধ্য থেকে মনোনীত একজন সদস্য।

এছাড়া, সংসদ ভেঙে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শপথ না নেওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান এনসিসি সদস্যরা কর্মরত থাকবেন। সংসদ না থাকাকালীন এনসিসির যারা সদস্য হবেন: রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত উপদেষ্টা পরিষদের দুজন সদস্য।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী এনসিসি নিম্নে উল্লিখিত পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রেরণ করবে: নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলগণ, সরকারি কর্ম কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার, মানবাধিকার কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার, প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার, প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধান এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো পদে নিয়োগ।

এনসিসি এবং এসংশ্লিষ্ট একটি পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ব্যবহারকারী অনেকেই পোস্টটি শেয়ার করছেন এবং তাদের নিজ নিজ বক্তব্য দিচ্ছেন।

পোস্টদাতা লেখক-গবেষক ফাহাম আব্দুস সালাম তার ফেসবুক পোস্টের শুরুতেই লেখেন, এনসিসি (সাংবিধানিক কাউন্সিল) হোলো সংবিধান সংস্কারের নিকৃষ্টতম প্রস্তাব।

তিনি লেখেন, এই প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যিনি বা যারা এই প্রস্তাব করেছেন তারা মনে করছেন যে সংসদে চিরকাল একটি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে থাকবে এবং সেই দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যখন সংসদে দুটি দল কাছাকাছি অবস্থায় থাকবে (যেমন অস্ট্রেলিয়ায় মূল দুই দল বেশির ভাগ সংসদে খুব কাছাকাছি অবস্থায় থাকে) এবং যেই অবস্থাটাই আমাদের কাম্য – সেই অবস্থায় এনসিসির কারণে সরকারে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। কেন? কারণ এনসিসিতে পার করার জন্য সরকার সবচাইতে নিকৃষ্ট তিনজন দলীয় ভৃত্যের নাম প্রস্তাব করবে। ফলে প্রশাসনে আরো নিচের থেকে দলীয়করণ করার ইনসেনটিভ বাড়ানো হবে।

লেখক ফাহাম এরপর লেখেন, একটা দেশের মিলিট্ৰি চিফ কে হবে- এটা ঠিক করার দায়িত্ব বা অধিকার বিরোধী দলীয় নেতার কখনোই থাকা উচিত না। আপনি যদি সিস্টেম ফেয়ার করতে চান তাহলে বহু লোকের (হাই অফিশিয়াল) আমলনামা বিরোধী দলের নেতার কাছে যাবে এবং সে এটা লিক করবে ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে। আপনার মনে হচ্ছে যে আমি বাড়িয়ে বলছি। কিন্তু বর্তমান অরাজনৈতিক সরকারের একজন উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন যে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে মন খুলে কথা বলা যায় না। কিছু বললেই সেটা নিয়ে ভিডিও হয়ে যায়। চিন্তা করেন যে অবস্থা কতটা ভয়াবহ। এই অবস্থায় আপনি যদি ডিজিএফআই বা গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা বিরোধী দলীয় নেতার কাছে দেন – এবং সে যদি হয় শেখ হাসিনা – ১০০% গ্যারান্টি যে পরের দিন সেটা দুনিয়া জানবে। আর যদি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট না দেন – বিরোধীদলীয় নেতা কীভাবে ডিসিশান নেবে যে অমুক তিনজনের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো?

তিনি লেখেন, সে দেখবে যে জেনরেল মকসুদের বাড়িতে শেখ হাসিনার ভাতিজা কেন চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি খেয়েছিল? শুধুমাত্র এলিজিয়েন্স দেখা হবে। কাউন্সিলের দুই সাইডই দেখবে কে আমার দলের গোলাম?

‘বাঙালির খাইসলত নিয়ে এত বেশি উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নাই’ মন্তব্য করে ফাহাম লেখেন, ভবিষতে অবশ্যই শেখ হাসিনার মতো খাইষ্টা, নেগেটিভ ক্যারেক্টার বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসবে এবং বিরোধী দলের নেতা হবে। বাংলাদেশের কালচার এই ধরনের নেগেটিভ ও ছ্যাচড়া মানুষকেই রাজনীতিতে রিওয়ার্ড করে। যেই পার্টি থেকেই আসুক তার কাজ হবে প্রতিটা কাজকে আটকানো। এই টাইপ মানুষকে আস্থায় নেওয়া সম্ভব না, টলারেট করা সম্ভব। বাংলাদেশের রিয়ালিটিতে এনসিসির ৯ জনের মধ্যে অন্তত ৪ জন চাইবে সরকার ফেইল করুক। যে চায় যে সরকার ফেইল করুক আর যে চায় যে সরকার ভালো করুক – এই দুজনের কনসেন্সাস হবে ডিজাস্টারাস।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি কেমন হতে পারে তা ভেবে ফাহাম আব্দুস সালাম আরো লেখেন, এটা মোটেও বিএনপির সমস্যা না। অতি অবশ্যই বিএনপি বিরোধী দলে যাবে। ভবিষ্যতে জামায়াত কিংবা এনসিপি কিংবা কোনো জোট সরকার গঠন করবে। তার সময়েও একই সমস্যা দেখা দেবে।

সবশেষে ফাহাম তোলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি। তিনি লেখেন, আমাদের দেশে ঐতিহাসিকভাবে দুটি সাংবিধানিক পদ নিয়ে গুরুতর সমস্যা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ দুটি পদে নিয়োগ দিতে নিয়ম করা যেতে পারে যে একটি সংসদীয় কমিটি তিনজন সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেটের ইন্টারভিউ নেবে। পুরা দেশ দেখবে লাইভ টিভিতে। এবং এই কমিটির প্রধান হওয়া উচিত বিরোধী দল থেকে। এই ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে সংসদ সদস্যরা (নিম্নকক্ষ) ভোটাভুটি করুক। পুরা জাতি জানুক যে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x