৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান ইউরোপীয় মানবাধিকার প্রধান

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতুরি বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনের ফলাফলকে সবাই সম্মান করতে হবে। নির্বাচনের পর বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার জন্য এটি অপরিহার্য শর্ত। সম্প্রতি ঢাকায় সফরকালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

মৌনির সাতুরি বলেন, ক্ষমতা পৃথকীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জনপরিসর ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের সঙ্গে কাজ করবে। মৌনির সাতুরির নেতৃত্বে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-কমিটির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে ইইউ অংশীদার দেশগুলোতে এ ধরনের তথ্য অনুসন্ধান মিশন পাঠানো হয়ে থাকে।

প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন ইসাবেল উইসেলার-লিমা (ইপিপি, লুক্সেমবার্গ), আরকাদিউস মুলারচিক (ইসিআর, পোল্যান্ড), উরমাস পায়েত (রিনিউ ইউরোপ, এস্তোনিয়া) এবং ক্যাটারিনা ভিয়েরা (গ্রিনস/ইএফএ, নেদারল্যান্ডস)। বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে সাতৌরি বলেন, দেশটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং একই সঙ্গে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর মধ্যে পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত।

সাতৌরি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ইইউ যখনই কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমরা মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনের শাসন এবং মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করি। কারণ এগুলো যেকোনো ইইউ চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

২০২৪ সালের জুলাইঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণের প্রসঙ্গে সাতৌরি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দৃশ্যমান প্রভাব ফেলছে। তবে তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত গৃহীত সংস্কারগুলো যদি ব্যাপক সমর্থন পায় এবং নির্বাচিত সংসদ সেগুলো বাস্তবায়ন করে, তাহলে সর্বোত্তম পরিবেশে এ উত্তরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন, নিয়োগকর্তা, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতাবৃন্দের সঙ্গে সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে তাদের বৈঠক করা কথা রয়েছে। সাতৌরি বলেন, সমৃদ্ধি ও মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির মধ্যে ভারসাম্য আনার উদ্দেশ্যে পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, এই চুক্তি অন্তর্বর্তী সরকারের পরও বহাল থাকবে এবং উভয় পক্ষকে ভবিষ্যতেও আবদ্ধ রাখবে। জনগণের উদ্বেগ ও স্বার্থ এতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি। সফরকালে সাতৌরি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করেন। তিনি গত আট বছর ধরে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ‘অসাধারণ প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করেন এবং বৈশ্বিকভাবে দায়িত্ব ভাগাভাগির আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার আর্থিক সহায়তার মাত্রা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বাংলাদেশকে একা এ বোঝা বহন করতে দেওয়া যায় না। তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মিয়ানমারে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সাতৌরি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন সংকট সমাধানে বৈশ্বিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। ঢাকায় সফরকালে প্রতিনিধিদল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x