১৮ জুন ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ১২:৪২ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বাংলাদেশ ব্যাংকে ভুয়া পরিচয়ে ১২ বছর চাকরি! মামা-ভাগনে বরখাস্ত

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ১২:৪২ এএম

👁 31 views

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগ্য হওয়া দূরে থাক, কখনও নিয়োগ পরীক্ষা দেননি। ভুয়া পরিচয়ে টানা ১২ বছর চাকরি করেছেন এক ব্যক্তি। সম্প্রতি এক অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর নিয়োগ বাতিলসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তাকে চাকরিতে ঢোকাতে সহযোগিতা করা মামাকে বরখাস্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৃত প্রার্থী মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী ওই পদে যোগ না দিয়ে বেছে নেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারকে। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত। তবে ঠিক এই শূন্য পদটিকেই কাজে লাগান তৎকালীন মানবসম্পদ বিভাগের উপপরিচালক মো. শাহজাহান মিঞা। তিনি নিজের ভাগনেকে ওই পদে নিয়োগ দেন প্রকৃত প্রার্থীর নাম, ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ভুয়া পরিচয়ে চাকরি পাওয়া ওই ব্যক্তি নিয়োগের সময় ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য জাল করেন। এরপর সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে ১২ বছরে দুটি পদোন্নতি পেয়ে পৌঁছে যান যুগ্ম পরিচালক পদে। তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ব্যক্তিটি প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নন। এরপরই তার নিয়োগ বাতিল ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কেউ এ ধরনের প্রতারণা করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত শাহজাহান মিয়াকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী বলেন, ‘২০১৩ সালে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রশাসন ক্যাডার দুই জায়গায় নিয়োগ পাই। আমি সিভিল সার্ভিসে যোগ দিই। কয়েক দিন আগে জানতে পারি আমার পরিচয়ে কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরি করছেন। পরে শুনি তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদি বাংলাদেশ ব্যাংকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে বেতন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতো, তাহলে বিষয়টি অনেক আগেই ধরা পড়তো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়োগের সময় পরিচয় যাচাই এবং ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের ঘাটতির কারণেই এই ধরনের প্রতারণা সম্ভব হয়েছে। ব্যাংকের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ভুয়া কর্মকর্তা ২০২৫ সালের ২৭ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। এরপর তার চাকরি বাতিল করা হয়। তাকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনা ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই এখন জরুরি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলমান তদন্ত শেষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x