ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম কম থাকায় খুশি হতে পারছেন না হাওড়ের কৃষক। উৎপাদন খরচ মিটাতে নৌকা থেকেই কম দামে ভিজা ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। কিশোরগঞ্জের ধনু নদীর তীরে চামড়াঘাট পাইকারি বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে 8 কোটি টাকার ভিজা ধান। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা।
হাওড়ের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়া বন্দরের ধনু নদীর তীরে পাইকারি ধানের বাজারে বোরো ফসলকে ঘিরে চোখে পড়বে নানা ব্যস্ততা। বড় বড় নৌকায় করে ধান আসছে নদীর ঘাটে। আর নৌকা থেকেই ধান মেপে তোলা হচ্ছে আড়তে। হাত বদল হয়ে ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
ধনু নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা চামড়া পাইকারি ধানের বাজারে ভেজা ধান কেনার ধুম পড়েছে। ধান বোঝাই নৌকা ঘাটে ভিড়তেই দরদাম করে নৌকা থেকে ধান মেপে আড়তে তোলা হচ্ছে। সেখান থেকে সামনে অপেক্ষমান পাইকাররা শত শত ট্রাক বোঝাই করে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। জেলার বড় বড় হাওড়ে এরই মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার ভালোয় ভালোয় ধান কাটতে পেরেছেন কৃষকরা। তবে ভালো ফলনেও তারা খুশি হতে পারছেন না।
কৃষকরা জানান, এবার ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেশি থাকায় বাজারে দামের সঙ্গে মিলছে না হিসেব। ধান কাটা ও পরিবহন খরচ মিটাতে নৌকা থেকেই কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। বর্তমানে বাজারে প্রকারভেদে ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা মনে বিক্রি হচ্ছে। এত লোকসানের মুখে পড়ছেন কৃষক।
আড়ত মালিকরা জানান, প্রতিদিন শত শত ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়িরা। হাওড়ে ধানের মান ভালো এবং এখানে কম দামে কেনা যায় ধান। প্রায় এক মাস ধরে এখানে চলে বেচাকেনা। প্রতিদিন বেচাকেনা হয় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার ধান।
কৃষি বিভাগ বলছে, হাওড়ের ধান শুকানো জায়গা নেই। তাই সরকারি খাদ্য গুদামে অনেকেই ধান বিক্রি করতে পারেননা। এ ছাড়া জরুরি টাকার প্রয়োজনে তারা কম দামে ধান বিক্রি করে দেন। তবে কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায় এ জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন, কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. সাদিকুর রহমান।
তিনি জানান, হাওড়ে ধান শুকানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে ভেজা ধান বিক্রি করে দেন। সামনের বছর যাতে হাওরে কৃষকরা ধান শুকাতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এবার জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল।