বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেছেন, আমরা নিশ্চিতভাবে জিতব। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থানে আমরা আছি। আমি মনে করি, আমার দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। তারেক রহমান জানান, বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারকে দুর্বল অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাত এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মুখোমুখি হতে হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি এখন সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ও নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছেন।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ‘ফ্যাসিস্ট দল’। বিএনপি অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ, বিশেষ করে গত বছরের ছাত্র আন্দোলন থেকে গঠিত নতুন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে সরকার গঠনে প্রস্তুত। এনসিপি প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব। তারা তরুণ, ভবিষ্যৎ তাদেরই।
তিনি ১৭ কোটি মানুষের দেশের জন্য ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কিছু দিক তুলে ধরেন। তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধু পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে আমাজন, ই-বে ও আলিবাবার মতো অনলাইন খুচরা বিক্রেতাদের সরবরাহকেন্দ্র হতে পারে। তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার ভারতের সঙ্গে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে, যা শেখ হাসিনার সময়কার ‘একতরফা’ সম্পর্ককে পুনর্গঠন করবে।
তারেক রহমান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, নতুন বিএনপি সরকার প্রতিশোধের চক্র ভাঙবে। এরই মধ্যে বিএনপি ৫ আগস্টের পর থেকে প্রতিশোধের সঙ্গে জড়িত সাত হাজার সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে বা বহিষ্কার করেছে। তবে আওয়ামী লীগকে আবার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে তিনি স্পষ্ট উত্তর দেননি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তারেক রহমান বলেছেন, যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে?
তারেক রহমান বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি বিদেশে পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে ইউনূস সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন। ২০০৮ সালে ফাঁস হওয়া এক মার্কিন কূটনৈতিক বার্তায় তারেক রহমানকে বলা হয়েছিল ‘লুটেরা সরকার ও সহিংস রাজনীতির প্রতীক। সেখানে অভিযোগ করা হয়, তিনি ‘প্রকাশ্যে ও নিয়মিত ঘুষ দাবির জন্য কুখ্যাত।
দলীয় অতীত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান স্বীকার করেন, যে কোনো সরকারেরই কিছু ত্রুটি থাকতে পারে, তবে তিনি দুর্নীতি দমনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, বিএনপিই বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করেছিল। তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া বর্ণনাই ওই মার্কিন তারবার্তার ভিত্তি তৈরি করেছিল এবং তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলা এখন প্রত্যাহার হয়েছে।