১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ৫ জুন ২০২৫, ৯:৩৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বিদেশি তকমায় শত শত ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশইন: সিজেপি

প্রকাশ : ৫ জুন ২০২৫, ৯:৩৯ পিএম

👁 31 views

উত্তর–পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে হাজার হাজার দরিদ্র ও মূলত শ্রমজীবী মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। কারণ, শত শত ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি বলে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশইন) পাঠানো হয়েছে। মুম্বাইয়ের নাগরিক সমাজভিত্তিক সংগঠন ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ (সিজেপি) প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী তিস্তা শেতলবাদের নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি জানিয়েছে, আসামের ৩৩টি জেলায় নারী, শিশু ও পুরুষদের বেআইনিভাবে আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।

তবে গত রোববার (১ জুন) বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে (পুশ ব্যাক) বলেও সিজেপির বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংস্থাটি আসামে অন্তত ছয়জন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকারপ্রাপ্ত ছয় নারী হলেন, হাজেরা খাতুন, সোনা বানু, রহিমা বেগম, জাহানারা বেগম, আসিফা বেগম ও সাহেরা খাতুন। এ প্রতিবেদন তৈরিতে আসামের কিছু সাংবাদিক ও সমাজকর্মীও অংশ নেন।

সিজেপির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ মে থেকে হঠাৎ রাজ্যের ৩৩ জেলায় পুলিশি অভিযান শুরু হয়। কোনো মামলা, নোটিশ বা আইনি ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রায় ৩০০ মানুষকে আটক করা হয়। সাংবিধানিক ও আইনি নিয়ম লঙ্ঘন করে তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরিবার বা আইনজীবীদের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। জানা গেছে, প্রায় ১৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হলেও প্রায় ১৪৫ জনকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যারা আটক হয়েছেন, তাদের অনেককে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করেছে। কেউ কেউ জামিনে মুক্ত, কেউ আবার নাগরিকত্ব প্রমাণে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অন্য দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাসন আদেশ বা দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি প্রকাশ করা হয়নি। এতে তাদের পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা
বরপেটা জেলার ভাল্লুকি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব হাজেরা খাতুনকে গত ২৫ মে বেআইনিভাবে আটক করা হয় বলে অভিযোগ। এর আগেও তাকে একবার আটক করা হয়েছিল এবং মামলা এখনো গৌহাটি হাইকোর্টে চলমান। হাজেরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। পরিবারকে কিছু না জানিয়ে তাকে আটক করা হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হাজেরার খোঁজে পরিবার বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে। মে মাসের শেষে বাড়ি ফিরে তিনি সিজেপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন।

হাজেরা জানান, তাকে এবং অন্যদের বরপেটা জেলা থেকে বাসে করে ৯১ কিমি দূরের মাটিয়া বন্দিশিবিরে নেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। বাসে বসিয়ে রাখার পর সামান্য ভাত দেওয়া হয়। পরে তাদের ছবি তোলা হয় এবং হাতে কিছু বাংলাদেশি টাকা দিয়ে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। বাস থেকে নামিয়ে বলা হয়, নিজেদের মধ্যে কোনো কথা বলা যাবে না। সেখানে তাদের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয় এবং রাতভর বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরদিন সকালে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসেছেন। পরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।

হাজেরা জানান, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা চললেও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ সময় তাদের দলের ওপর এবং বিশেষ করে নারীদের ওপর প্রতিবাদের কারণে খায়রুল ইসলাম নামে এক শিক্ষককে মারধর করা হয়। পরে তারা নিজেরাই ভারতের দিকে হাঁটা শুরু করেন। হাজেরার ছেলে জানান, ৩১ মে রাত ১১টার দিকে খবর পান, হাজেরা ও সোনা বানু নামের এক নারী গোয়ালপাড়া জেলার মহাসড়কে অবস্থান করছেন। স্থানীয় এক ছাত্রনেতাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

সিজেপির প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্য নারীদের অভিজ্ঞতাও ছিল একই ধরনের। তাদের অনেককে বৃষ্টির মধ্যে সীমান্ত এলাকার ধানখেতে বসে থাকতে হয়েছে। আশ্রয়হীন অবস্থায় বয়স্ক নারী ও শিশুদের রাত কাটাতে হয়েছে ভিজে কাপড়ে। এক স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, আসামে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কবে পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যাবে, কেউ নিশ্চিত নয়। যদিও সবার সঙ্গে এটি ঘটবে না, কিন্তু কার সঙ্গে কখন হবে—তা কেউ জানে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আসামে আগামী বছর নির্বাচন। এর আগেই বাঙালি মুসলমানদের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিছু রাজনীতিক এ বিষয়ে মুখ খুললেও, প্রক্রিয়াটি এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x