২৭ জুন ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১২:২৮ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

‘বিমানের প্রতিটি বিভাগেই আছে সংঘবদ্ধ একেকটা অপরাধ চক্র’

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ প্রযোজক এবং বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের বলেছেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যেন একটা মাফিয়া সংগঠন। এই সংগঠনের প্রতিটি পরতে পরতে দুর্নীতি জড়িয়ে আছে। গ্রাউন্ড হ‍্যান্ডলিং, ট্রেইনিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্লাইট অপারেশন, ইত্যাদি—প্রতিটি বিভাগেই আছে সংঘবদ্ধ একেকটা অপরাধ চক্র। এদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নিতে ব‍্যর্থ হয়েছে প্রতিটি সরকার। কারণ এদের চক্র কেবল দেশেই সীমাবদ্ধ নেই। আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সাথেও রয়েছে এদের সখ‍্যতা।’

তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে একথা বলেন।

জুলকারনাইন বলেন, ‘একটি দেশের ফ্ল‍্যাগ ক্যারিয়ার যারা অপারেট করেন, সেই পাইলটদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে নারী সহকর্মীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ। অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপের কাছে বিদেশের হোটেল কক্ষে নারী সহকর্মীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একজন পাইলট এমন সিসিটিভি রেকর্ডও রয়েছে। চলন্ত উড়োজাহাজে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন পাইলট, এমন দাবিও তারা করেছেন। এমন অসংখ্য অভিযোগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পরও বিমান কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থেকেছে। লোক দেখানোর জন্যে ৩/৪ মাসের জন‍্যে কাউকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও, পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে গোপনে অভিযুক্তকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়ছে, এমন উদাহরণ রয়েছে।’

সায়ের আরো লেখেন, আর অভিযোগ করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাকরি হারাতে এবং সামাজিকভাবে হেয় করা হয় ভুক্তভোগীকে।

তিনি বলেন, ‘বিমানের পাইলটদের মাঝে রয়েছে দুটি ভাগ, একপক্ষ হলো—পাইলট বংশ, আরেক পক্ষ—সাবেক বিমান বাহিনী কর্মকর্তা চক্র। এই পাইলট বংশরা বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের ‘অচ্ছুত’ বা নিচু জাতের বলে ট্রিট করেন। তারা মনে করেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওপর রয়েছে তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অধিকার। এই চক্র নিজ পুত্র-কন‍্যা-শ‍্যালিকা-শ‍্যালক-দুলাভাই-কাজিন সহ সকলকে এনে ঢুকিয়েছে বিমানে। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে বিমানের এক পাইলট দুবার তার পাইলট স্ত্রীর জাল শিক্ষা সনদ দিয়েও একপ্রকারের পার পেয়ে গেছেন। এরাই মূলত বিমানের অপারেশনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারাও কম নন, তারাও বিমানকে ঘিরে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্র, যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য তাদের। কিন্তু সকল পক্ষই এক হয় যখন চোরাচালান সংঘটিত হয়। সাধারণত বড় চোরাচালানে সকল পক্ষ এক হয়, যেমন ধরুন লাশের কফিন বলে স্বর্ণ ঢুকিয়ে কেবল কফিন নিয়ে আসা, কফিনের ভেতরে লাশের বদলে থাকে স্বর্ণ—এমন বহুকিছু ঘটেছে বলেই দাবি করা হয়েছে।’

জুলকারনাইন বলেন, ‘বিমানের বিষয়ে সরকারের কোনো সংস্থাই তদন্ত করে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। কারণ বিমানের এই পাণ্ডারা দাবি করে ‘দেশের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ারে বদনাম করে নাকি বিশেষ গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও ক্ষমতায় থাকা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে’, এমনটাই চলছে যুগের পর যুগ ধরে। কিন্তু সকল অপকর্মই একটা সময় উন্মোচিত হয়ে যায়, সম্ভবত তেমনটাই একসাথে ঘটতে চলেছে বিমানের এই ক্যান্সারাস চক্রের সাথে।’

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x